কাঁঠা ও কৌটোর রহস্য

– – – Sukla Sarkar

পথিক নামে এক জেলে তাঁর বউ আর তিন বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে মাছ ধরে নদীর ধারে সুখে জীবন কাটাত। একদিন মাছ ধরতে গিয়ে সে আর ফিরে এলো না। তাঁর বউ ভাবল – পথিককে কুমিরে টেনে নিয়ে গেছে। গ্রামবাসীরা নদীতে জাল ফেলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোনো খবর পেল না। আত্মীয়স্বজন তখন তাঁর বউকে উপদেশ দিল – শোন,তিন দিন মেনে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম কর। তারপর একটা কাজকাম দেখে লেগে পড়। 
ন’বছর পর একদিন গ্রামবাসীরা এসে খবর দিল – ও বৌ শুনছো,পথিকের মতো একজনকে আমরা ঐ বুড়ো বটগাছের তলায় দেখে এলাম। মেয়ে ঘরে বসে পরীক্ষার পড়া তৈরি করছিল একমনে। কথাটা শুনে সে মায়ের কাছে ছুটে এসে বলল – মা,বাবা নয়তো! চলোনা দেখে আসি। ইতিমধ্যে অনেক লোকজন বটগাছের তলায় জড়ো হয়েছে। মা দূর থেকে দেখেই মেয়েকে বলল – খুকি,সত্যিই তোর বাবা। মেয়ে দৌড়ে কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাবা বলে ডাকলো। কিন্তু পথিক মেয়েকে চিনতে পারলো না। মা তখন বুঝিয়ে বলল – ও তোমার মেয়ে। পথিক তখন মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে কাঁদতে লাগলো। 
এরপর পথিক মেয়ে,বউকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এল। সেদিন রাতে খেয়ে-দেয়ে আশ্চর্‍্য ঘটনার কথা সে বউ,মেয়েকে বলল। “জাল ফেলে যখন একটা মাছও পেলাম না,তখন ভাবলাম – বাড়ি আর ফিরে যাব না। মনের দুঃখে নদীর ধারে বসে রইলাম। রাত নেমে এল। আকাশে চাঁদ উঠল,তারারা চারদিক আলোয় ভরিয়ে তুলল। এমন সময় মাছের দল এসে নদীর ধারে খেলা করতে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে জাল ফেললাম। কিন্তু জাল আটকে গেল। ঝাঁপ দিলাম জলে জালটা তুলে আনতে। আচমকা ঢুকে পড়লাম জলের নীচে এক গভীর গুহার মধ্যে। দেখলাম,সেখানে এক বুড়িমা বাস করে। আমার দুঃখের কথা শুনে বুড়িমা বলল – যা ঐ পাশের ঘরে,তোর জালটা নিয়ে নে। সেখানে গিয়ে দেখি – অনেক হীরে-মানিকে ঘর ভরপুর।কিন্তু জাল তো নেই। বুড়িমা তখন নিজে গিয়ে দুহাতে দুটো জাল নিয়ে এল। একটা সোনার সূতো,হীরের কাঠির; অন্যটা পুরানো,আসল সূতোর জাল। আমি আমার আসল সূতোর জালটি চেয়ে নিয়ে নিলাম। বুড়ি আমার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে কি যেন ভাবল,তারপর ভেতরে গিয়ে একটা কাঁঠা আর একটা কৌটো নিয়ে এসে বলল – নে বাছা,কাঁঠাটা তিনবার ঝাড়া দিলে সুস্বাদু চাল পাওয়া যাবে আর তোর মনে কোনোদিন কোনোরূপ সন্দেহ জাগলে কৌটোটা খুললে সন্দেহ দূর হবে। এই বলে বুড়ি বিদায় নিল,আমিও ফিরে এলাম।
সব শুনে পথিকের বউ তখন কাঁঠাটা তিনবার ঝাড়া দিল,অমনি সত্যি সত্যি সুস্বাদু প্রচুর চাল পাওয়া গেল। এদিকে পথিকের মনে সন্দেহ জাগল,এরা কি সত্যিই আমার মেয়ে,বউ? আমার এত অল্প বয়স আর এদের এত বেশি বয়স কেন? এই তো সকালে মাছ ধরতে গেলাম আর রাতে ফিরে এলাম। পথিক তখন বুড়ির কথামতোই ঘর থেকে কৌটোটা এনে খুলল। খোলামাত্রই পথিক তাঁর আসল বয়স আর স্মৃতি ফিরে পেল। নিজেকে এবার বয়স্ক দেখে অবাক হল। বউ তখন বলল – ওগো,তুমি মাছ ধরতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলে,ন’বছর পর ফিরে এসেছো। এই তো তোমার আসল বয়স। এরপর থেকে তাদের আবার সূখে-শান্তিতে দিন কাটতে লাগল।