আসেনি অলি

 

  -হরবিলাস সরকার

 

বি.এ ক্লাসের পাঠ – ‘পণপ্রথা নারীজীবনের অভিশাপ’রচনাটি পড়তে পড়তে দিদিমণি আজ স্মৃতিবিজড়িত হয়ে পড়লেন।আর বাঁধভাঙা প্লাবনের মতো দুগাল বেয়ে ধেয়ে আসা অশ্রু মুখখানা লুকিয়ে দুহাতে মুছে নিলেন।নীলিমা বিভোর হয়ে শুনছিল পাঠদান।কিন্তু নিমেষে যে ব্যথার ছবি নিজের চোখে দেখল তা যে দাবানলের চেয়েও বিধ্বংসী লেলিহান শিখায় দাউ দাউ করে সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে অবিরত-বুঝতে দেরি হল না।তার পলকহীন দৃষ্টি চোখে পড়তেই দিদিমণি এবার বলতে লাগলেন,‘জানোতো নীলিমা,যুগে যুগে শোষণের রূপ যেমন বদল হয়েছে,তেমনি পণপ্রথাও কালে কালে নতুন রূপে এসেছে।সভ্যতার দীর্ঘপথের বাঁকে বাঁকে মানুষই এই রূপ বদলের কান্ডারি।বিরুদ্ধে আইন রচিত হয়।সেই আইনকে ফাঁকি দেবার পথও খোঁজা হয়।দেখোনা বলে – দাবি নেই,আপনি আপনার মেয়েকে সাজিয়ে-গুছিয়ে দেবেন।এটাওতো দাবিহীনের মোড়কে পণ-ই।বড়লোক বাবা বড়লোকের মেয়ে খোঁজে,না চাইলেও দেবে।মনের এই সুপ্ত বাসনা-এওতো পণ-ই।সরকারি চাকুরিরত পাত্র সরকারি চাকুরিরত পাত্রী খোঁজে।সোনার ডিম পাড়া হংসী ঘরে আসবে – সেওতো পণ-ই।ন্যায়-নীতি,বিবেক,মনুষ্যত্ব,মূল্যবোধ,মর্যাদাবোধের আধার,দেশের জন্য উজাড় করা মন-প্রাণ যার,সে-ও তাঁর বিপ্লবী জীবনের সাথী খোঁজে-যার বাবা অন্ততঃ পাঁচলাখ টাকা মেয়ের নামে এম.আই.এস করে দিতে সক্ষম।
নীলিমা জানতে চায় – দিদি,জীবনে কখনো বুঝি ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন?

 

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস।ক্ষণিকের নীরবতা।তারপর চোখে দুফোঁটা জলসহ মৃদু হাসি।‘গরিব ঘরে জন্মেছি।টিউশন পড়িয়ে,বৃদ্ধ বাবার সেবা করে এইতো ভালোই আছি।