‘বর্ষামুখ দিন’

    
প্রিয় আজ সন্ধ্যায় ,
ঋতুচক্রের নিয়মে গ্রীষ্মের পরেই আসে বর্ষা ।তবে বিশ্বচরাচরের সবকিছুরই একটা আরম্ভ বা সূচনা আছে ।তেমনি বর্ষারও আরম্ভ বা সূচনা আছে ।যদিও সেই সূচনা কারণবশতঃ বিলম্বিতও হতে পারে ।আবার সূচনারও নির্দিষ্ট ব্যাপ্তি আছে ।তাহলে ‘বর্ষামুখ দিন’ বলতে কী বোঝায় ?
         আকাশে ধ্বনিত হয় বর্ষার আগমন-বার্তাদিগন্তের ওপাড় থেকে বর্ষাদূত কালো মেঘ ধেয়ে আসে,মাঝে-মধ্যে দু-এক পশলা বৃষ্টি,একটু শীতল ছোঁয়া,আবার মেঘমুক্ত আকাশ,সেই আগুনঝরা রোদ,সেই অসহনীয় উত্তাপ; মানুষ,পশু-পাখিদের হাঁসফাঁস,উদ্ভিদকুলের নীরবে দাঁড়িয়ে দগ্ধ হওয়া – এমন অবস্থা জ্যৈষ্ঠের বিদায়বেলায় আর আষাঢ়ের শুরুতেও চলতে থাকে ।এই সময়কালই ‘বর্ষামুখ দিন’-এর ব্যাপ্তি অর্থাৎ প্রাক-বর্ষাকাল
                    এই ‘বর্ষামুখ দিন’-এর অনুভূতি কেমন ?
তীব্র দাবদাহের মাঝে ক্ষণিকের হলেও করালগ্রাসী জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ডটাকে ঢেকে দেয় বর্ষা-দূত মেঘ ।নেমে আসে তাঁর অশ্রুধারা তপ্ত বসুন্ধরার গায়ে ।একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস,তবু অধীর অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে বসে থাকা – কবে,কোন্ শুভক্ষণে আসবে বর্ষা ? জেগে ওঠে কবিমন;সে নেচে ওঠে ছন্দে,সুরের তালে তালে ।সে শুনতে পায় – রিমঝিম,ঝম ঝম পদধ্বনি ।
                   মুখ ভার করা প্রকৃতি উল্লসিত হয়ে ওঠে; নতুন সৃষ্টির উন্মাদনায় বিষাদের সুর ভুলে ধরে মধুর গীত – ‘এসো,এসো ওগো বর্ষা আমার হৃদয়-বাতায়নে,মরুবুক জুড়াও তোমার স্নিগ্ধ-শীতল পরশে,নির্বিষ কর আকাশ-বাতাস তোমার নির্মল ধারায়,ভরিয়ে তোল এ ভুবন অপরূপ সৌন্দর্যে ।’
                   ‘বর্ষামুখ দিন’-এর অনুভূতি আরও অনেক অনেক বেশি প্রবল হয়ে ওঠে বিরহ-কাতর জীবনে ।তীব্র দাবদাহে শাখে শাখে প্রস্ফুটিত ফুলেরা ম্লান হয়ে আসে ।দূরে বসে অলিরা চোখের জলে দুঃসহ বেদনার কবিতা লেখে ।এমন সময় যদি বর্ষাদূত ‘মেঘ’ বয়ে আনে সুখবর,শীতল স্পর্শে শুকনো পাঁপড়িরা আবার সতেজ হয়ে ওঠে ।ফিরে যাওয়া অলিরা আবারও ডানা মেলে ।মিলনের কত আকুতি !কত ব্যাকুলতা ! এওতো বর্ষামুখ দিন ।তারপর অতিশীঘ্রই একদিন মিলন-মোহনার পাড়ে নামবে বর্ষা অঝোরে ।

                                              
                                                                                                                                                   নমস্কারান্তে

হরবিলাসসরকার
রাধারঘাটসাহেব্বাগান,মুর্শিদাবাদ