ই-শিক্ষা

— Harabilash Sarkar (হরবিলাস সরকার)

অতিমারি ‘করোনা’ মানব জীবনে যতই অভিশপ্ত হয়ে উঠল শিক্ষার জগতে ততই তাঁর আশীর্বাদ আপনা থেকেই ঝরে পড়ল । সে  নিয়ে এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত । সে দীর্ঘকাল আমাদের সঙ্গী হয়ে বিরাজ করবে । তাঁর করালগ্রাস থেকে জীবন বাঁচাতে একমাত্র রক্ষাকবচ – নিভৃতবাসে থেকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বশরীরে উপস্থিতির দিন শেষ হয়ে গেছে । আধুনিক প্রযুক্তিতো হাতের কাছেই । অতএব চাই এখন ইন্টারনেট শিক্ষা (ই – শিক্ষা) । তা হবে অনাগত ভবিষ্যতের কাছে এক বিরাট উপহার । বর্তমান শাসক প্রভুরা এই ‘মত’ই পোষণ করেন । আর তাই শুরু হয়েছে আয়োজন ।

কেমন হবে ‘ই-শিক্ষা’

বিদ্যালয়ে যাওয়ার যখন প্রয়োজন নেই, বিদ্যালয় গৃহেরও প্রয়োজন নেই, শ্রেণিকক্ষেরও প্রয়োজন নেই । ঘরে বসেই হবে শিক্ষা । সেখানে শিক্ষকেরও প্রয়োজন নেই । এসবের যখন প্রয়োজন নেই, বই-খাতা-পত্রেরও প্রয়োজন নেই । একটা স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার আর একটু কারিগরি জ্ঞান থাকলেই যথেষ্ট । দূরে কোন স্থানে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বা স্টুডিওতে পাঠদান প্রক্রিয়া চলবে । সেই পাঠদান প্রক্রিয়া ভেসে উঠবে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের পর্দায় । প্রয়োজনে কোন ছাত্র-ছাত্রী অস্বচ্ছতা বোধ করলে প্রশ্ন করতেও পারবে । তবে প্রতিটি বিষয়ের পাঠদান যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের, সে কারণে সীমিত কিছু ছাত্র-ছাত্রীই প্রশ্ন করতে পারবে । এই পাঠদান আবার এমনও হতে পারে যে, কর্তব্যরত শিক্ষক রুটিনমাফিক তাঁর পাঠদানের অংশটি ভিডিও করে নির্ধারিত চ্যানেল সংস্থাকে পাঠিয়ে দিলেন । সংস্থা তা রিলে করে দেবেন । এক্ষেত্রে অবশ্য প্রশ্ন করার সুযোগ থাকবে না ।

প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে এখনো ইন্টারনেট ব্যবস্থা পৌঁছায়নি বা ভালো পরিষেবা নেই এবং দারিদ্র্যপীড়িত ঘরের ছাত্র-ছাত্রী যাদের স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার নেই তাদের জন্য থাকবে টিভির মাধ্যমে শিক্ষাদান ।

পাঠের মাঝে থাকবে ব্রেক বা অবকাশ । একঘেয়েমি, ক্লান্তি কাটাতে চলবে বিনোদন, উপভোগের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন ।

প্রযুক্তির দুনিয়ায় ইতিমধ্যে আমরা কেমন আছি

প্রযুক্তি আমাদের জীবনের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে । আমাদের শ্রমের অপচয় রোধ করেছে। অজানা,অচেনা,না-শেখা কতকিছু জানছি, চিনছি, শিখছি । কিন্তু সুফলের বদলে কুফল অনেক বেশি। প্রযুক্তি আমাদের বেশিরভাগকেই বিশেষ করে ছাত্র-যুব সমাজকে বশীভূত করেছে, আমরা নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ভুলে গেছি, সংযমী হতে ভুলে গেছি । এখন আর খেলার মাঠে যাওয়ার  প্রয়োজন নেই । ঘরে বসেই সেই  স্বাদ মেটানো যায় । জিনিস কেনা-বেচা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব কাজকর্মই ঘরে বসেই সেরে ফেলা যায় । দেশ-বিদেশের খবর এখন ঘরে বসেই শোনা যায়, চোখে দেখা যায় । বিনোদনের নানা উপাদান চোখের সামনে । ভোগের দুনিয়ার নানা হাতছানি । অলস জীবনযাপনে আমরা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি । বন্দীদশায় জীবনের একটা একটা করে দিন কেটে যাচ্ছে । দূরের পৃথিবী এসেছে কাছে, কিন্তু কাছের মানুষ, আত্মীয়-পরিজনকে ঠেলে দিয়েছি দূরে । পর্দায় সিরিয়াল দেখছি, অতিথি বা পড়শী এলো । না, দরজা খোলা হবে না,পরে আসবেন । অন্ততঃ সৌজন্য দেখাতে হলে ‘একটু বসুন, সিরিয়ালটা শেষ হলে চা করছি’ । শিষ্টাচার বোধের কোন বালাই নেই । অমানুষী,স্বার্থপরতাই জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে । ঘরে বসেই শিখছি অপরাধ, জঘন্নতার নানা কলাকৌশল । পর্নগ্রাফির টানে ছাত্র-যুব সমাজ মজে থাকছে । এ যেন মাদকের নেশার চেয়েও গুরুতর । সমাজে বাড়ছে ব্যাভিচার, নির্যাতন, ছলনা আর প্রতারণা । কত সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত অসময়ে ঝরে পড়ছে ঝরা ফুলের মত ।

ই-শিক্ষার বাস্তব ফলাফল

একটা প্রাণহীন যন্ত্র, তার পর্দায় ভেসে উঠবে শিক্ষকের ছায়া। ছায়া বলবে কথা । ছাত্র তাঁর কথা বুঝুক  না বুঝুক পাঠ এগিয়ে যাবে । যন্ত্র যখন, সম্পর্কও হবে যান্ত্রিক । পর্দায় যতক্ষন আলো থাকবে ততক্ষণই সম্পর্ক। শিক্ষা কি শুধুই পাঠদান, পুঁথির জ্ঞান? শিক্ষা তো দেবে চরিত্র, মনুষ্যত্ব, বিবেক, মূল্যবোধ,স্নেহের স্নিগ্ধ কনা । নাহলে তো মানুষ যন্ত্রে পরিণত হবে । জীবনতো বিজ্ঞানের আধারেই বিকশিত হয় । বিজ্ঞানতো শুধুই যন্ত্র নিয়েই কারবার নয়, তার মধ্যে আছে জীবনদর্শন, দার্শনিক মনন। তার মধ্যে আছে রক্ত-রসের সম্পর্ক, প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস । ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে নতুন মানুষ, আসে নতুন সত্য, সভ্যতা বিকশিত হয় ।

কিন্তু ই-শিক্ষায় তৈরি হবে কিছু পন্ডিত ব্যক্তি । আবার এই ই-শিক্ষা মানবসমাজে গড়ে দেবে এক সুদৃঢ় বিভাজন রেখা । যার এপারে থাকবে আর্থিকভাবে সফল কিছু সীমিত পরিবার, যারা ই-শিক্ষার সুযোগ টুকু নিতে পারবে । যেটুকু ঘাটতি দেখা দেবে গৃহশিক্ষক রেখে  পূরণ করে নেবে । আর ওপারে থাকবে আর্থিকভাবে দুর্বল অগণিত পরিবার, যারা দুবেলা-দুমুঠো পেটের খাবার যোগাতেই অপারগ, যাদের স্থায়ী কোন কাজ নেই , স্থায়ী ঠিকানাও অনেকের নেই । ইটভাটার খুপরি, ভূমিহীন চাষির কুঁড়েঘর, কারখানার শ্রমিকের ঘিঞ্জি বস্তি, পরিযায়ীর কুঠুরি, বহুতলের নিচে ফুটপথ – যেখানে দিনের আলো আসে না সেখানে ই-শিক্ষা কল্পনার অতীত। রাতের আকাশে চাঁদ ওঠে, একপিঠে জ্যোৎস্নার আলো, আরেক পিঠে চির অন্ধকার । সেই অন্ধকারে ই-শিক্ষার তরঙ্গ ঢেউ তুলবে কেমন করে?

ফেলে আসা দিনগুলি কেমন ছিল

শিশুকালের খোলা মাঠ, খোলা আকাশ হারিয়ে গেছে । প্রকৃতির সাথে নিবিড় সান্নিধ্য হারিয়ে গেছে । দামাল ছেলেদের বৃষ্টিভেজা দিন আর ফুটবল মাঠের জলকেলি আজ আর নেই । ছুটির দিনে ফড়িং ধরা, চৈত্র-বৈশাখে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে চরকি ঘোরানো,ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা আর ফাঁকা মাঠে ঘুড়ি ওড়ানো ছিল বড়ই মজা আর আনন্দের । কখনও ছিপ ফেলে মাছ ধরা, ঝড়ের দিনে অপু-দুর্গার মত ভাইবোন মিলে দে ছুট –  আম কুঁড়াতে যাওয়া, ভাদ্র মাসে পাকা তাল পড়তো গাছ থেকে দুপ করে পুকুরের জলে – জলে নেমে কিংবা লগি দিয়ে কাছে টেনে সেই তাল কুড়িয়ে আনা, কচুড়িপানা ভর্তি ডোবার জলে বাঁশের তৈরি চালন দিয়ে খ্যাও মেরে কই মাছ ধরা, কখনও ফাঁদ পেতে চড়ুই পাখি ধরা, আরও কত কিছু কোমল হৃদয়কে প্রাণবন্ত করে তুলত । পৌষ মাসের ভোরে গায়ে কুয়াশা মাখা, খালি পায়ে ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজা আর রাতে ছোট খেজুর গাছ থেকে মিষ্টি রস পেরে খাওয়া, জ্যোৎস্না রাতে ঘরের পাশে বুড়ো আম গাছের ডালে দোল খাওয়া আর মায়ের বকুনি, ভালবাসায় ভরে উঠত কচি মন ।

কঠোর শৃঙ্খলাও ছিল । খুব ভোরে উঠে প্রাতকাজ সেরে বই নিয়ে পড়তে বসা, নির্দিষ্ট সময়ে স্নান করে খেয়ে দেয়ে বই খাতা নিয়ে দূরে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাওয়া, বিকেলে বাড়ি ফিরে কাঁচা লঙ্কা ডলে ভিজে ভাত খেয়ে খেলার মাঠে ছুটে যাওয়া – হাডুডু, গোল্লাছুট, লুকোচুরি, চলত হরেক রকমের খেলা, কখনো বড়দের ভলিবল খেলা দেখা এক অদ্ভুত শিহরণ জাগাত মনে, বুকে সাহস, দক্ষতাও জমত । এর পর দিগন্তরেখায় সূর্য নামতেই মায়ের ডাক পড়তো । ধুলোমাখা শরীরে এক দৌড়ে বাড়ি ফিরে পুকুরের জলে ঝাঁপ, কিছুটা সাঁতার কেটে গা ধুয়ে ঘরে ঢোকা । সাঁঝের প্রদীপগুলো জ্বলে উঠত, শুরু হতো আবার বই নিয়ে পড়তে বসা । ঘরে ঘরে চলতো সুর করে পড়া মুখস্ত করা, লেখা আর অংক কষা । অন্তত এক প্রহর কাল চলত এমন মনোনিবেশ । শেষ করতে না পারলে ভোররাতে উঠে পড়তে হতো । মা হারিকেন ধরিয়ে দিয়ে পাশে বসে থাকতেন ।

বাড়ির মতোই কঠোর অনুশাসন ছিল বিদ্যালয়ে । প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনই তৈরি করে যেতে হতো । কোনদিন পড়া না পারলে ছুটি হতো না । পড়া তৈরি হলে তবেই মিলতো ছুটি । মাঝে মাঝে কোনো না কোনো মাস্টারমশাই বাড়ি এসে খোঁজ নিতেন পড়াশোনার ব্যাপারে । টিফিনে কিছুটা অবকাশ পাওয়া যেত, স্কুলের মাঠে তখন চলত খেলা । ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মাস্টারমশাই, দিদিমণিরাও খেলতেন । গড়ে উঠত বন্ধুত্বের এক নিবিড় সম্পর্ক । নিবিড় সম্পর্কের বন্ধন গড়ে উঠত অভিভাবক-শিক্ষকের মধ্যেও । সন্তানের অন্যায়-অপরাধ আপনা থেকেই দূর হয়ে যেত । আমার নিজের কৈশোরের একদিনের একটা ঘটনা বলি –

একদিন স্কুলে যাবার পথে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ঢিল মেরে অন্যের গাছ থেকে আম পেরেছিলাম । নালিশ এল স্কুলে । হেড স্যার ছুটির পরে আমাদের ক’জনকে বাইরে লাইন করে দাঁড় করালেন । ছেলের ফিরতে দেরি দেখে মা কিছুটা পথ এগিয়ে গেলেন । দূরে দাঁড়িয়ে মা লক্ষ্য করলেন – স্যার আমাদের সবাইকে বেত্রাঘাত করছেন । চোখের জল ঝরতে লাগল । ওদিকে মায়েরও চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো । ফিরে এলেন মা । কিছুক্ষণ পরে আমরাও যে যার বাড়ি ফিরে এলাম । মা দেখলেন – বেতের প্রত্যেকটি আঘাত আমার পিঠে চিহ্ন রেখে গেছে । পরদিন মা হেড স্যারকে নিমন্ত্রণ করে বাড়িতে ডাকলেন । তিনি এলেন ছুটির পরে । মা এক থালা মিষ্টি আম কেটে এনে খেতে দিয়ে বললেন – ‘ মাস্টারমশাই, আমার একটি মাত্রই ছেলে, দেখবেন – ও যেন মানুষ হয়’ । মাস্টারমশাই খেলেন, তাঁর অনুরোধে আমিও খেলাম পাশে বসে । তারপর ‘মাধ্যাকর্ষণ’ শক্তি বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলেন । সে বছর সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় বিজ্ঞানে আমি আশি নম্বরের উত্তর দিয়ে  আশিই পেয়েছিলাম । জীবনে আর কখনো পরের গাছ থেকে চুরি করে আম বা অন্য কোন ফল পারিনি ।

ই-শিক্ষার অন্ধকারময় দিক

(ক) অতিমারি শাসকের কাছে একটা বড় অস্ত্র হয়ে গেল এবং তা হল সুযোগের অস্ত্র । এমনিতেই ক্রমাগত শিক্ষা সংকোচন এবং শিক্ষার উপর ব্যয়-ভার কমানো হচ্ছিল । এখন এক লহমায় সরকার বাহাদুরের আরো বিপুল ব্যয়-ভার কমে যাবে । কেননা, বিদ্যালয়টিই যখন থাকবে না বিদ্যালয় গৃহ নির্মাণ বা সংস্কারের প্রয়োজন থাকবে না । শিক্ষকেরও প্রয়োজন থাকবে না । মিড-ডে-মিল রাঁধুনিদেরও প্রয়োজন থাকবে না । বিদ্যালয় পরিদর্শক, আরো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষেরও প্রয়োজন পড়বে না ।

(খ) শিক্ষার বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের পথও খুলে গেল । গজিয়ে উঠবে বিভিন্ন চ্যানেল সংস্থা, তারা শিক্ষার ডালি নিয়ে বাজার বসাবে । আবার নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আসর জমাবে, কে কত মুখরোচক করে শিক্ষা পরিবেশন করতে পারে । গেটা আপ যার যত আকর্ষণীয়, রঙিন হবে তার পসার তত বেশি জমবে । শিক্ষা-অশিক্ষা যাই হোক, মার্কশিটে নাম্বার উঠবে লাফিয়ে লাফিয়ে । পাশের সার্টিফিকেট, ডিগ্রী পাওয়া (কেনা) যাবে সহজেই ।

(গ) জীবন শৈলী শিক্ষার নামে যৌনশিক্ষার পণ্যটি বাজারে আসবে। ইতিমধ্যে কয়েক যুগ ধরে ছাত্র যুব সমাজ মনীষীদের জীবন চর্চা থেকে বঞ্চিত, অথচ সেলিব্রিটি-তারকাদের জীবন বৃত্তান্ত নখদর্পনে । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা কে কী করে, কী পোশাক পরে, কেমন করে হাঁটে তারই চর্চা । রূপচর্চার হিড়িক প্রত্যন্ত গ্রামেও । সুন্দরের নামে চামড়াটা ফর্সা করার বিজ্ঞাপন (শিক্ষা) সর্বত্র ।

(ঘ) দারিদ্র্যের পীড়ন আরও প্রবলতর হবে । একটা মোবাইল ফোন কিনে দিতে না পারার জন্য কত ছেলেমেয়ের প্রাণ বলি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই ।

(ঙ) মোবাইল, কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে । মানসিক অবসাদ, ক্যান্সার, চিত্ত-বিকৃতি,দৃষ্টি-লোপ প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধির জন্ম হবে । বিকৃত লালসা পুরণে, অপূরণে আত্মহত্যা ও খুনের স্পৃহা বাড়বে । চূড়ান্ত অমানবিক মন তৈরি হবে ।

(চ) শ্রেণীবিভাজন, বৈষম্যের রেখা আরো স্পষ্ট হবে । আর্থিকভাবে সচ্ছল যারা, তারা শিক্ষার ঘাটতি গৃহশিক্ষক রেখে পূরণ করে নেবে । অবশ্য মানুষ তারাও হবে না, তৈরি হবে যন্ত্রমানব অর্থাৎ বিবেক-মনুষ্যত্বহীন এক অদ্ভুত পণ্ডিত ব্যক্তি । পুঁথিগত শিক্ষার সমস্ত ফসল তারাই পাবে, সমাজের উপরতলায় থেকে সমস্ত সুবিধা তারাই ভোগ করবে আর দুর্বলের মাথার উপর ছড়ি ঘোরাবে ।

(ছ) শ্রেণীবিভাজনের রাষ্ট্রে সব শাসকই মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা (অমৃত কথা) বলতে বলতেই তাদের নিজেদের মতবাদ, দৃষ্টিভঙ্গি, ধ্যান-ধারণা, সংস্কৃতিকেই  সুকৌশলে প্রয়োগ করতে বদ্ধপরিকর । অতএব, যে শিক্ষানীতি, সিলেবাস এসবের অনুকূলে যাবে তাই তারা প্রণয়ন করবেন । পরীক্ষিত সত্যকে আড়াল করতে বিজ্ঞানের নামে মায়াবিজ্ঞান (অপবিজ্ঞান) মগজে ঢোকাতে মরিয়া হবেন । ফলস্বরূপ মনের গভীরে বাসা বাঁধবে অন্ধবিশ্বাস। আদিম কুপ্রথাগুলি আবার অঙ্কুরিত হবে ব্যাপকভাবে । কারিগরি বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতি ঘটলেও আজকের নবীন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিরাজ করবে অন্ধকার যুগে ।

খুঁজি আলোর পথ

মারন ভাইরাস ‘করোনা’র আবির্ভাব হয়েছে বলে আমরা আজ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি, স্কুল-কলেজের পাঠ বন্ধ । তাই ই-শিক্ষার আয়োজন শুরু হয়েছে । কিন্তু একবারও কি ভেবেছি – প্রকৃতি আজ এত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কেন? নীল আকাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে কেন? জলে, বাতাসে এত বিষ মিশেছে কেন? বনভূমি অবলুপ্ত হয়েছে কেন? কেন অসহায় বনের প্রাণীরা ছুটে আসে লোকালয়ে? জলবায়ুর পরিবর্তনে দায়ী কারা? কেন বাড়ছে মানুষের সমাজে এত বিভেদ-বৈষম্য? কেন এই মৃত্যু মিছিল? বনের প্রাণীদের শরীরে অবস্থান করা মারন ভাইরাস মানুষের শরীরে এখন বাসা বেঁধে সাম্রাজ্য বিস্তার করছে – সেতো মুষ্টিমেয় স্বার্থপর মানুষের বিলাসিতা, লোভ – লালসা, উশৃংখল জীবনযাপনের জন্যই । যদি প্রকৃত কারণগুলো খোঁজার চেষ্টা করতাম পৃথিবীর মঙ্গল হতো, মানুষের মঙ্গল হতো । প্রকৃত রোগের বিহিত না করে মিছেমিছিই  পরিত্রাণের পথ যদি খুঁজে বেড়াই তাতে সভ্যতার বিকাশ থমকে দাঁড়াবে।

বন্ধু, চেয়ে দেখো – এই কদিনে ‘করোনা’ কত শিক্ষা দিয়ে গেল! নদীর জল পানের যোগ্য হয়ে উঠেছে । বাতাস বিষমুক্ত হয়েছে । পাখিরা আনন্দে পাখা মেলে উড়ছে । হিমালয় মাথা উঁচু করে খিল খিল করে হাসছে । গাছেদের বিবর্ণ পাতা আবার সবুজ হয়ে উঠেছে ।

তথাপি দমবন্ধ খাঁচায় এহেন শিক্ষা কেন? শিক্ষার আঙ্গিনা হোক নিবিড় ঘন মুক্ত প্রকৃতির মাঝে । সেখানে বিজ্ঞান থাকবে, বিবেক মনুষত্ব থাকবে, থাকবে শিক্ষক-ছাত্রের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্য আর স্নেহের বন্ধন ।

Tags: e shiksha, e shiksha kya hai, e shiksha portal, e shikshanam, eshiksha, eshiksha fee payment, eshiksha founder, eshiksha school, shiksha