Alo Aadhar – আলো-আঁধার

 

নাটিকা –  আলো-আঁধার

       : নিশিকান্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় :


দিদিমণি তথা প্রধান শিক্ষিকা বিদ্যালয় গৃহ ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করছেন। এমন সময় দলে দলে শিশুরা ব্যাগ-কাঁধে বিদ্যালয়ে চলে এসেছে।


শিশুরাঃ গুড মর্নিং, ম্যাম।


দিদিমণিঃ গুড মর্নিং, মাই চিলড্রেন।


এরপর শুরুর ঘন্টা বাজালেন দিদিমণি। ব্যাগ রেখে শিশুরা সকলে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ল। শুরু হবে প্রার্থনা।


দিদিমণিঃ (আদেশ করলেন) সাবধান -। বিশ্রাম -। সাবধান -। জাতীয় সংগীত শুরু করো।

(সকলে একসাথে)

“জনগণমনঅধিনায়ক জয় হে…….।”


দিদিমণিঃ তোমরা সকলে এবার মন দিয়ে শোনো। আজ তোমাদের স্যার ‘বিনয়বাবু’ আসবেন না। উনি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে ব্যস্ত আছেন। তাই আজ আমি তোমাদেরকে একাই পড়াবো। সকলে মিলে শিশু-ওয়ানের ঘরে বসবে। যাও। নিজ নিজ জায়গায় গিয়ে বসে পড়ো।


(দিদিমণি ছাত্র-হাজিরা খাতা ও টি. এল. এম নিয়ে এসে চেয়ারে বসলেন। শিশুরা উঠে দাঁড়াল।)


দিদিমণিঃ সিট ডাউন।


শিশুরাঃ থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম।


দিদিমণিঃ তোমরা চুপটি করে বসো। আমি নাম প্রেজেন্ট করছি।


(দিদিমণি মুখ চিনে চিনে হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দিলেন।)


দিদিমণিঃ আজ তোমরা মাত্র ৩৭ জন এসেছো ৯০ জনের মধ্যে। সবাইকে বলবে স্কুলে আসতে। সামনে বছরের শেষ পরীক্ষা, ঠিক আছে?


শিশুরাঃ ঠিক আছে, ম্যাম।


দিদিমণিঃ এখন তোমরা প্রাতঃস্মরণীয় ছড়া বলো। আমি তোমাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে আসি।


শিশুরাঃ ঠিক আছে, ম্যাম।


(চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ‘ভোলা’কে নিয়ে মায়ের প্রবেশ।)


মাঃ দিদিমণি, একটু দেরি হয়ে গেল।


দিদিমণিঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। যাও ভোলা, জায়গায় গিয়ে বসো।


মাঃ একটু দেখবেন, ছেলে যেন পড়াশোনা করে।


দিদিমণিঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, অবশ্যই দেখব। তুমি, আমি একই গাঁয়ের মানুষ। তোমার ছেলে তো আমারও ছেলে।


মাঃ আপনার কথা শুনে বড়ই ভালো লাগলো দিদি। নিশ্চয়ই আমার ছেলের ভালো হবে। আজ আমার আরও ভালো লাগছে, ভাঙাচোরা স্কুলটা এখন কত সুন্দর হয়েছে!


দিদিমণিঃ আমরা তো সকলেই সুন্দরের পূজারি। তবে কী জানো – বাইরেটা নয়, ভেতরটা সুন্দর হলে তবেই সেটা আসল সুন্দর।


মাঃ দিদি,কথাগুলো আমার মনটা ছুঁয়ে গেল। আমি তাহলে আসি এখন।


দিদিমণিঃ হ্যাঁ, এসো।


(ভোলার মা চলে গেল। দিদিমণিও প্রস্থান করলেন।)


(চতুর্থ শ্রেণির মেয়ে মনিকা (মনিটর) সামনে এসে দাঁড়ালো।)


মনিকাঃ প্রাতঃস্মরণীয় ছড়া শুরু করো।


             (সকলে একসাথে বলবে)


“সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি।

আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে,

আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে।”


“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।

মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন,

মানুষ সইতে হবে – এই তার পণ।”


(মনিকা নিজ আসনে গিয়ে বসে পড়ল।)


(দিদিমণি হিসেবের খাতাপত্র নিয়ে প্রবেশ করলেন।)


দিদিমণিঃ (খাতাপত্র টেবিলে রেখে  টি.এল.এমগুলো শ্রেণিকক্ষে সাজিয়ে দিলেন।) শোনো, শিশু-ওয়ানের যারা আছো, তোমরা প্রথমে ‘অ,আ’ তারপর ‘ক,খ’ সুন্দর করে লেখ। আর ওয়ান থেকে চতুর্থ শ্রেণির সকলে ‘বাংলা’ ও ‘ইংরেজি’ এক পাতা করে হাতের লেখা লেখ।


শিশুরাঃ ঠিক আছে, ম্যাম।


দিদিমণিঃ আজ আমি তোমাদেরকে কতগুলো সুখবর দিচ্ছি। আজ তোমাদের দুপুরের খাবারে মাংস হবে, চাটনি হবে, তার সাথে মিষ্টিও থাকবে। কাল ডিম দেবো, ফল দেবো। আর পরশু কী হবে? মাছ হবে, পায়েস হবে। হাত ডুবিয়ে খেতে হবে, ভারী মজা হবে।


শিশুরাঃ (আনন্দে, ছন্দে-সুরে,হাততালি দিয়ে)

পরশু মোদের মাছ হবে, পায়েস হবে। হাত ডুবিয়ে খেতে ভারী মজা হবে।


দিদিমণিঃ আরও সুখবর আছে। আমাদের চকচকে স্কুল বাড়ি তো তৈরি হয়েছে। বসার বেঞ্চ হয়েছে। ফ্যান, লাইট হয়েছে। ডাইনিং হল হয়েছে। সুন্দর টয়লেট হয়েছে। আর এবার আরও অনেক টাকা এসেছে। ওই টাকায় পার্ক তৈরি হবে। তোমরা সেখানে খেলবে, কেমন?


শিশুরাঃ খুব মজা হবে, ম্যাম। খুব মজা হবে।


দিদিমণিঃ বেশ। লেখাপড়া করো। আমি এই ফাঁকে খাতা-পত্রগুলোর কাজ সেরে নিই, কেমন?


শিশুরাঃ ঠিক আছে, ম্যাম।


(দিদিমণি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ক্ষণিক পরে শিশুরাও খেলায় মত্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ খিদে-পেটে ঘুম দিচ্ছে।)


দিদিমণিঃ (ঘড়ি দেখে) এই যে ছোট্ট বন্ধুরা, তোমাদের খাবার সময় হয়ে গেছে। আর শোনো, সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নাও। আজ বিশেষ কারণে তোমাদের হাফ স্কুল।  খেয়েদেয়ে ছুটি।


(সকলে ব্যাগ-কাঁধে হেঁটে চলে ডাইনিং হলের দিকে। দিদিমণিও প্রস্থান করলেন।)


                    : কিছু দিন পর :


(ভোলা আজ স্কুলে যায়নি। উঠানে ভাইয়ের সাথে খেলা করছে। পাশের রাস্তায় দিদিমণির ছেলেমেয়েরা স্কুল-বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ ওরা ভোলা আর তার ভাইকে দেখে বাড়িতে ঢুকলো।)


মনীষাঃ কীরে ভোলা, আজ স্কুলে যাবি না?


রঞ্জনঃ দিদি আজ মনে হয় সরকারি স্কুল ছুটি।


মনীষাঃ কিন্তু ভাই, মা তো স্কুলে গেল।


রঞ্জনঃ মা আমাদের গ্রামের স্কুলেরই হেড দিদিমণি। হয়তো ছুটি হলেও কোনো কারণে গিয়েছে।


ভোলাঃ নারে রঞ্জন, ছুটি না। আসলে আজ আমি যাব না।


মনীষাঃ কেন রে?


ভোলাঃ ভেতরে আয়, বলছি।


        (মনীষা, রঞ্জন ভেতরে আসবে।)


মনীষাঃ বল্, স্কুলে যাবি না কেন?


ভোলাঃ মা তো তোদের জমিতেই ধান কাটতে গেছে। ভাইকে কে দেখবে? আমাকেই যে সামলাতে হচ্ছে। সেজন্যই স্কুলে যাবো না।


রঞ্জনঃ তুই তো মাঝে-মধ্যেই স্কুলে যাস না। আর ক’দিন বাদে ফাইনাল পরীক্ষা। কী করে পাশ করবি?


মনীষাঃ ও কিছুতেই পাশ করবে না ভাই, ফেল করবে।


ভোলাঃ আমি অনেক নাম্বার পাই, জানিস্?  স্যার, ম্যাম আমাকে এতো এতো নাম্বার দিয়ে দেয়।


রঞ্জনঃ তাই নাকি রে, তুই বুঝি খুব ভালো ছাত্র?


ভোলাঃ বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? গতবার থ্রীতে আমি অনেক নাম্বার পেয়েছি। আমাদের স্কুলে কেউ ফেল করে না।


মনীষাঃ বেশ, ভালো কথা। তাহলে বল্ তো দেখি, ৫ টা ৫ এর যোগফল কত হয় ?

                     (ভোলা হাসে)

বুঝেছি, বলতে পারবি না। আচ্ছা এবার বলতো – আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি, ইংরেজিতে কী হবে?

                  (ভোলা নিরুত্তর)

ঠিক আছে, এবার বাংলায় উত্তর দে। আমাদের গ্রামের নাম কী?

               (ভোলা আবারও হাসছে)


রঞ্জনঃ বলতে পারলি না তো? আমি তো ক্লাস থ্রিতে পড়ি। উত্তরগুলো আমিই তোকে বলে দিচ্ছি। ৫টা ৫এর যোগফল হলো – পাঁচ-পাঁচে পঁচিশ। আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি, ইংরেজি হলো – আই রিড ইন ক্লাস ফোর। আর আমাদের গ্রামের নাম হলো – নিশিকান্তপুর।


মনীষাঃ আচ্ছা ভোলা, বল্ তো – আমার ব্যাগে বাংলায় কী লেখা আছে?


ভোলাঃ (হেসে হেসে বানান করে পড়ার চেষ্টা করছে।) চ……চ…….


মনীষাঃ কী রে, ‘চ’ বলে যে থেমে গেলি।


রঞ্জনঃ ভোলা, তুই বাংলা পড়াও শিখিস্ নি? লেখা আছে – চতুর্থ শ্রেণি। বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন।


মনীষাঃ চল্ ভাই। এখানে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমাদের গাড়ি এক্ষুনি চলে আসবে। (দু’ পা এগিয়ে যাবে।)


ভোলাঃ (পিছু ডাকলো) শোন্।


(মনীষা, রঞ্জন দু’ পা পিছিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো।)


ভোলাঃ তোদের স্কুলে বুঝি খুব ভালো পড়াশোনা হয়?


মনীষাঃ হ্যাঁ রে ভোলা। প্রতিদিন পড়া তৈরি করে স্কুলে যেতে হয়। বাড়ির কাজ করে নিয়ে যেতে হয়। শ্রেণির কাজ করতে হয়। স্কুলে গান শেখানো হয়। আবৃত্তি শেখানো হয়। ছবি আঁকা শেখানো হয়। খেলাধুলা করানো হয়। অনুষ্ঠান হয়। মনীষীদের জন্মদিন পালন করা হয়। দেয়ালপত্রিকা প্রকাশ করা হয়। কত কিছু ! স্কুল কামাই করা যায় না। এক-দু’দিন কামাই হলেই স্যার, ম্যামেরা বাড়ি আসেন খোঁজ নিতে। খুব কড়া নিয়ম।


ভোলাঃ খুব কড়া নিয়ম?


রঞ্জনঃ হ্যাঁ রে, অনেক নিয়ম মেনে আমাদেরকে চলতে হয়। যখন-তখন বাড়ি আসা যায় না।


ভোলাঃ তোদের স্কুলটা কোথায় রে?


মনীষাঃ আমাদের গ্রামের মাঠ-ঘাট পেরিয়ে একটা নদী পড়ে, সেই নদীর ওপারে শহর। সেখানেই আমাদের স্কুল।


রঞ্জনঃ বুঝলি ভোলা? আমাদের খুব বড় স্কুল। অনেক ছাত্রছাত্রী পড়ে সেখানে। সবাই গাড়ি করে আসে।


ভোলাঃ ওটা বুঝি বড়লোকদের স্কুল?


ভোলাঃ বড়লোকদের কিনা জানি না। তবে অনেক টাকা-পয়সা লাগে।


মনীষাঃ জানিস্ – আমাদের স্কুলে ২৫ জন স্যার, ম্যাম আছেন। কেউ বাংলা পড়ান, কেউ ইংরেজি পড়ান, কেউ অঙ্ক করান, কেউ পড়ান বিজ্ঞান, কেউ শেখান নাচ-গান, কেউ আবৃত্তি। শনিবারে স্পোকেন ইংলিশ, শিশুসভা হয়।


ভোলাঃ আমাদের তো একজন স্যার আর তোদের মা। যেদিন দু’জনের একজন না আসে সেদিন আমরা সবাই মিলে একটা ঘরে বসি। খাতার পাতা ছিঁড়ে রকেট বানিয়ে ওড়াই। চোর পুলিশ খেলি। কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলি। শেয়ালের ডাক ডাকি। বাঘের ডাক ডাকি। আবার ঘুম পেলে একটু ঘুমিয়ে নিই। এই করতে করতে খাবারের সময় হয়ে যায়। খেয়ে-দেয়ে পেট-ব্যথা করছে বলে চলে আসি বাড়ি। খুব মজা হয় আমাদের। আচ্ছা বল্ তো – তোদের স্কুলে কি খাবার হয়?


মনীষাঃ আমাদের স্কুলে খাবার হবে কেন রে? আমাদের তো বেসরকারি স্কুল।


ভোলাঃ তাহলে তোদের স্কুল ভালো না। আমাদের স্কুলই ভালো। রোজ খাবার হয়। অনেক রকমের খাবার হয়। মাঝে মাঝে ফল খাই। মিষ্টিও খাই।


রঞ্জনঃ সে তো আমরা বাড়িতেই খাই। আবার কত কত খাবার স্কুলেও নিয়ে যাই।


                (গাড়ির হর্ন বেজে ওঠে)


মনীষাঃ ভোলা, চলিরে। আমাদের গাড়ি এসে গেছে।


(দুই ভাই-বোন চলে যায়। ভোলা আবার ভাইয়ের সাথে খেলতে শুরু করে।)


               : আরও কিছু দিন পর :


(ভোলার পরীক্ষা হয়ে গেছে। আজ রেজাল্ট। মা আজ কাজে যায়নি। পথচেয়ে বসে আছে, কখন ছেলে রেজাল্ট হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরবে।)


মাঃ দুপুর গড়িয়ে গেল, ছেলে আমার কখন  রেজাল্ট হাতে বাড়ি ফিরবে! জানি না। ঠাকুর, তুমি ওর দিকে মুখ তুলে তাকিও। আমার আশা যেন পূর্ণ হয়। ওর বাপ গেছে ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজে। তারও কত আশা –  ছেলে নতুন বছরে হাইস্কুলে যাবে।


           (উল্লসিত হয়ে ভোলার প্রবেশ)


ভোলাঃ মা – ,ওমা – , এই দেখো আমার রেজাল্ট। অনেক নাম্বার পেয়েছি মা।


মাঃ ওরে সোনা, এসেছিস তুই? কই, দে দেখি বাপ রেজাল্টখান।


ভোলাঃ নাও মা। (মায়ের হাতে দেয়।)


(রেজাল্টে চোখ রেখে মায়ের মুখে চওড়া হাসি। ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করে।)


মাঃ ঠাকুর ! এই অভাগিনীর আশা পূর্ণ করেছো। বাপ আমার, এবার তুই হাইস্কুলে ভর্তি হবি। চাষা-ভুষার ঘরে তুই যে আলো জ্বালবি।


ভোলাঃ মা, দেখে বলোতো – আমি কত নাম্বার পেয়েছি।


মাঃ বাপরে, পেটের দায়ে কাজে গেছি সেই ছোট্ট থেকেই। আমার দু’চোখে যে অন্ধকার।  আমি কি আর বলতে পারবো? তুই-ই দেখে বল্ – কত পেয়েছিস।


ভোলাঃ মা রে, আমিও বলতে পারবো না। ম্যাম আমাকে রেজাল্ট দিয়ে বলল, “ভোলা, তুই অনেক নাম্বার পেয়েছিস।” আমি তো এসে তোমাকে সেকথাই বললাম।


মাঃ তাহলে এতদিনেও তুই সংখ্যা শিখিস্ নি? (ভেতরটা কেঁদে ওঠে। চোখের জল গড়িয়ে পড়ে  দু’গাল বেয়ে।)


ভোলাঃ তোমার চোখে জল কেন মা, আমি পড়াশোনা শিখতে পারিনি বলে? (জল মুছে দেয়) কেন শিখতে পারিনি – আমি তো বলতে পারবো না। শুধু সংখ্যা কেন, আমি বাংলা, ইংরেজি কোনোটাই পড়তে পারিনা, লিখতেও পারিনা। শুধু নামটা কষ্ট করে লিখতে পারি। ইস! যদি এসব পারতাম, আজকে তোমার চোখে জল দেখতে হতো না। ভাগ্য আমার মন্দ। মা, আমার আর হাইস্কুলে যাওয়া হবে না। আর পড়াশোনা হবে না। (ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।)


(মা এবার ছেলের চোখের জল মুছে দেয়।)


মাঃ জানিস্ বাপ, আজ বুঝতে পারছি –  পড়াশুনা গরিবের জন্য নয়। জগতে দু’ চারজনই নাম করতে পেরেছে। সবার কি সেই মনোবল থাকে? থাকলেও পারে না। সমাজ হয়তো চায় – চাষার ছেলে চাষাই হোক। দিনমজুরের ছেলে দিনমজুর হয়েই জন্মাক। তুই দুঃখ করিস্ না। দিন ঠিক কেটে যাবে। এবার তোর বাপ বাড়ি ফিরলে তার সাথেই নাহয় তোকে পাঠিয়ে দেবো ভিন রাজ্যে। এখানে থেকে কীইবা করবি?


(হৃদয়বীনার তারে বিষাদময় সংগীত বেজে ওঠে। চোখের জল ফুরায় না।)

……………………………………………………….