Swasthya Jiboner Sathee – স্বাস্থ্য জীবনের সাথী

Swasthya Jiboner Sathee - স্বাস্থ্য জীবনের সাথী
(শিশু নাটিকা)

স্বাস্থ্য জীবনের সাথী

–  হরবিলাস সরকার

: প্রথম দৃশ্য :
 
(খোলা মাঠে পঠন-পাঠন)
 
শিক্ষিকাঃ সাবধান। বিশ্রাম। সাবধান। ছোট্ট বন্ধুরা, এই খোলা মাঠ আজ আমাদের শ্রেণিকক্ষ। আমাদের পাঠের বিষয় ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’। প্রথমে তোমাদের বলি – শরীর ও মন সুস্থ থাকার নামই হলো স্বাস্থ্য। আবার স্বাস্থ্য ভালো থাকলে লেখাপড়ায় মন বসে। অতএব, স্বাস্থ্য জীবনের উন্নতির সোপান। তাহলে এখন আমাদের জানতে হবে – স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আমাদের কী কী করতে হবে।
 
যূথিকাঃ দিদিভাই, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আমাদের খেলাধুলা করতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
 
শিক্ষিকাঃ ঠিক বলেছো। এখন বর্ষাকাল। নানা রকম রোগের উপদ্রব হয় এসময়।
 
মানোয়ারাঃ দিদিভাই, এখন চারদিকে ডেঙ্গু রোগের উপদ্রব শুরু হয়েছে। মানুষের মৃত্যুও ঘটছে।
 
যূথিকাঃ জানিস্ মানোয়ারা, খবরে বলেছে – বাড়ির আশেপাশে, কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না। পরিষ্কার জমা জলে মশারা ডিম পাড়ে, আর দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে।
 
মানোয়ারাঃ হ্যাঁ রে, খবরটা আমিও শুনেছি। এক ধরনের মশা যখন আমাদের শরীরে বসে রক্ত-পান করে, তখন ডেঙ্গুর জীবাণু রক্তে মেশে। তারপর কয়েকদিনের মধ্যেই সৃষ্টি হয় ডেঙ্গু রোগ।
 
যূথিকাঃ প্রচন্ড জ্বর আর মাথায় যন্ত্রনা শুরু হয়। বমি হয়। পেটের দোষ দেখা দেয়। শরীরের বল-শক্তি লোপ পায়। কখনও নাক দিয়ে রক্তপাতও ঘটতে পারে।
 
মানোয়ারাঃ সময়মতো এবং সুচিকিৎসা না হলে মৃত্যু নিশ্চিত।
 
শিক্ষিকাঃ তাহলে বন্ধুরা, বলোতো – কোন মশা কামড়ালে আমাদের শরীরে ডেঙ্গু রোগ হয় ?
সকলেঃ দিদিভাই, এডিস মশা।
শিক্ষিকাঃ বেশ, ডেঙ্গু রোগ সম্বন্ধে তোমরা তো অনেক কিছুই জেনে ফেলেছো। তবে শুধু তোমরাই জানলে হবে না। সকলকে জানাতে হবে, সতর্ক করতে হবে।
 
যূথিকাঃ হ্যাঁ দিদিভাই, সকলকে সচেতন করা আমাদের কর্তব্য।
 
মানোয়ারাঃ আর এই ভালো কাজের নামই হলো সমাজসেবা।
 
(ছুটতে ছুটতে মনিকার প্রবেশ)
 
মনিকাঃ দিদিভাই, দিদিভাই, আমাদের স্কুলের ছাত্র লক্ষ্মীরামের ডেঙ্গু হয়েছে। অবস্থা ভালো নয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
 
শিক্ষিকাঃ এ তুমি কী খবর দিলে মনিকা! তাহলে তো আমাদের একবার হাসপাতালে যাওয়া উচিত। এই, চলো তোমরা। চলো আমার সাথে।
 
সকলেঃ হ্যাঁ দিদিভাই চলুন।
 
: দ্বিতীয় দৃশ্য :
 
(হাসপাতাল। লক্ষ্মীরাম শয্যা-শায়িত।)
 
মাঃ (বুকফাটা আর্তনাদ) ডাক্তারবাবু – , আপনি বাঁচান আমার ছেলেকে।
 
(নার্স ও ডাক্তারবাবু ছুটে আসছেন।)
 
মাঃ ছেলেকে বাঁচান ডাক্তারবাবু।
 
(ডাক্তারবাবু নাড়ী দেখছেন। স্টেথো বুকে বসিয়ে হৃদযন্ত্র পরীক্ষা করছেন। সিস্টার স্যালাইন ও রক্ত প্রস্তুত করে রাখছেন। বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা।)
 
ডাক্তারবাবুঃ সিস্টার স্যালাইন।
 
নার্সঃ হ্যাঁ স্যার। (দ্রুত স্যালাইন দেবে।)
 
ডাক্তারবাবুঃ রক্তটাও চালু করুন। বি পজেটিভ।
 
নার্সঃ হ্যাঁ স্যার, রেডি আছে। (রক্ত চালু করে দেবে।)
 
ডাক্তারবাবুঃ (রোগীর কপালে হাত দিয়ে দেখবেন) শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সিস্টার, ইমিডিয়েট ইনজেকশন।
 
নার্সঃ (ইনজেকশন দেবেন। দেবার পর -) স্যার, শরীর তো একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে।
 
ডাক্তারবাবুঃ (নাড়ী ধরে দেখবেন। তারপর নিজের কপাল চাপড়ে ব্যর্থতা প্রকাশ করবেন।) আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল।
 
(এমন সময় শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ)
 
শিক্ষিকাঃ ডাক্তারবাবু, আমাদের ছাত্রের এখন কী অবস্থা?
 
ডাক্তারবাবুঃ আমি দুঃখিত। যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। পারলাম না।
 
নার্সঃ স্যার, গায়ে সাদা কাপড়টা………?
 
ডাক্তারবাবুঃ হ্যাঁ সিস্টার, ঢেকে দিন।
 
মাঃ ঠাকুর! এ তুমি কী করলে! একটা ছেলে দিয়েছিলে, তাও নিয়ে নিলে ?
 
শিক্ষিকাঃ ইস! কোলহারা মা এখন কী নিয়ে বাঁচবে! লক্ষ্মীরাম, তুমি আজ আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছো! অনেক দূরে! ভালো থেকো।
 
(নেপথ্যে বিষাদময় সংগীত)
 
(সকলের দৃঢ় অঙ্গীকার, আর যেন একটি প্রাণও অকালে না ঝরে। সেই অঙ্গীকারের বাণী-লেখা-ফেস্টুন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা হাতে নিয়ে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।)
 
: সমাপ্ত :