— Sukla Sarkar (শুক্লা সরকার)
যমালয়ে প্রচুর মৃত ব্যক্তির আগমন ঘটে চলেছে । যমরাজ মর্ত্যে এলেন খোঁজ নিতে। পথে গঙ্গার ধারে বনানী আর একটি অপূর্ব বাঁধানো ঘাট চোখে পড়ল । আঃ সবুজে পরিপূর্ণ বনানী কী করে তার রূক্ষ রূপ বদলে ফেলল! নদীর জলরাশি কোন্ যাদু বলে এমন নির্মল রূপ ধারণ করল! অথচ আজ মানুষ্যসমাজ এত শোকাহত কেন? রহস্য ভেদ করতে কৌতূহল দানা বাঁধলে বুকে । যমরাজ ব্রাহ্মণ বেশ ধারণ করে স্নান করতে এলেন ঘাটে । বনানী, গঙ্গা দুজনকেই জিজ্ঞেস করায় ওরা বলল – – মর্ত্যে এখন ‘করোনা’ নামে এক ভয়ংকর জীবাণুর প্রকোপে অতিমারি দশা চলছে । আর তারই জন্য চলছে লকডাউন। কলকারখানা, যানবাহন সবকিছু বন্ধ । মানুষের যত ক্রিয়াকর্ম, অপকর্ম সব বন্ধ । দেখছেন না মলিন আকাশ আবার আগের মত নীল হয়েছে, পাখিরা দল বেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে । আমরাও আমাদের আগের রূপ ফিরে পেয়ে উল্লসিত ।
ছদ্দবেশী যমরাজ তখন ব্রাহ্মণ বেশ পরিহার করে তাঁর বাহন শকুনের পিঠে চড়ে প্রচন্ড গতিতে ছুটে চললেন স্বর্গরাজ্যের দিকে । সেখানে পৌঁছে দেখলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, ‘এই তিনে মিলে একেশ্বর’ মর্ত্যের ব্যাপারে জরুরী শলাপরামর্শে ব্যস্ত । একেশ্বরকে প্রণাম জানিয়ে যমরাজ বললেন – – হে বিশ্বপিতা, অকাল মৃত্যুর কারণে মৃত ব্যক্তির ঠিকানা হ্নল নরক বা পাতালপুরী, অতএব পাতালে যেভাবে করোনায় বলী হয়ে মৃত ব্যক্তির সমাবেশ ঘটছে তাতে আমরাও সংক্রমণের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত । এখন আমার কী করণীয় বলে দিন ।
একেশ্বর সমাধানসূত্র বললেন – – হে যমরাজ, তুমি এক্ষুনি ফিরে যাও। পাতালেও লকডাউন ঘোষণা করো, মাস্ক পরিধান করো এবং সকলকে পরাও । সাবান জলে ঘন ঘন হাত ধোও এবং সকলকে ধোঁয়াও ।
যমরাজ ফিরে এসে সেই মতই ব্যবস্থা করলেন। যত মন্ত্রী , চেলা – চামুন্ডা আছে সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন । পাতালপুরীর চার সীমানায় সেনা মোতায়েন করে কড়া প্রহরার বিধিব্যবস্থা চালু করলেন যাতে ভেতরে হাঁচি – কাশি – সর্দ্দি – জ্বর – শ্বাসকষ্টে ভুগছে এমন কেউ কোন ভাবে প্রবেশ করতে না পারে ।
মাস্ক পরিধান করে যমরাজ এবং যমরানী ত্রিস্তরীয় বলয় প্রহরার মাঝখানে সিংহাসনে বসে আছেন আর বারবার সাবান জলে হাত ধুয়ে নিচ্ছেন । তাঁর গুপ্তচর বাহিনী সদা সতর্ক।
একটু পরে এক গুপ্তচর এসে খবর দিল, ‘যমরাজ, অতিশয় চিন্তার বিষয় । মর্ত্যে করোনা তাঁর রূপ বদলে ফেলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে’। ‘কী’ বল হে গুপ্তচর, করোনা তাঁর রূপ বদলাতে পারে!’ বলেই যমরাজ কাঁপতে লাগলেন ।
‘মহারাজ, শুধু তাই নয়, করোনা নিচ্ছিদ্র পথেও প্রবেশ করতে পারে’। একথা শুনে যমরানীরও থরকম্প উঠলো ।
এমন সময় আর এক গুপ্তচর এসে খবর দিল – – ‘মহারাজ, পাতালের প্রবেশপথে এক ফুটফুটে মৃত শিশু এসে কান্নাকাটি করছে । সে ভেতরে প্রবেশ করবেই, কোন বাধা মানছে না । জানা গেছে – মর্ত্যে ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছু সময় পরেই সে তার দেহ পরিত্যাগ করে এখানে ছুটে এসেছে’ ।
‘কি নাম তার?’ “আজ্ঞে ‘করোনা’। ” ‘করোনা!’ যমরাজ সন্ত্রস্ত চিত্তে গিন্নিকে বলতে লাগলেন – – ‘করোনা তাহলে মনুষ্যরূপ ধারণ করতে পারে । অবশ্যই সে যে কোন রূপ ধারণ করতে পারে । আর এই পাতাল রাজ্যে প্রবেশ করতে চাইছে । আটকাবো কী করে ?’
হঠাৎ একটা মাছি উড়ে এসে যমরাজের নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে কোথায় মিলিয়ে গেল । যমরাজ হাঁচির পর হাঁচি দিতে লাগলেন । তার নাক, চোখ দিয়ে জল ছিটকে পড়তে লাগল । যেন বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ ঝলকানি দিয়ে মাথার খুলিটাকে চৌচির করে দিল । সিংহাসন ছেড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন যমরাজ । সব শক্তি তার ক্ষীন হয়ে গেল । যমরানী মুহূর্তে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে এলেন যে, করোনা মাছি রূপে যমরাজের ভেতরে প্রবেশ করেছে । আর বুঝি রক্ষা নেই । এমনটাই ভেবে তিনি নিজেকে বাঁচাতে স্বামীকে ফেলে পড়িমরি দৌড় শুরু করলেন । স্ত্রীর বেগতিক অবস্থা ঠাওর করে যমরাজ উঠে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে মরণপণ দৌড় দিলেন সেই দিকে ।
আতঙ্কে ছুটতে লাগলেন গুপ্তচরেরা, ছুটতে লাগলেন মন্ত্রী, চ্যালা – চামুন্ডারা, পাতালপুরীর যতো সেনা । সাবধান, সবাই সাবধান। ছুট দিল বন্দীশালার শেকল ভেঙ্গে মৃত ব্যক্তিরা । ঢুকে পড়ল মর্ত্য থেকে আসা মৃত ব্যক্তিরা । উথাল – পাথাল বাতাসও বইতে লাগলো । ধূলায় ধূসরিত হল প্রকৃতি । ঝড়, শুধুই ঝড় ।
Good funny story