পাতালপুরীর রাজকন্যা


          শুক্লা বিশ্বাস সরকার

একদেশে এক রাজা ছিল।সে একদিন তার ছেলেকে ডেকে বলল-বাবা আমার তো বয়স বাড়ছে।এখন থেকে তোমাকে আমার সব কাজকর্ম বুঝতে ও শিখতে হবে।ছেলে মনের আনন্দে বলল বেশ তো বাবা,আমি প্রথমে এই দেশটা ভ্রমণ করে দেখে বুঝে নিতে চাই।বাবা বলল বেশ তুমি মন্ত্রীর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে এসো।পরের দিন বাবার কথা মত সে দুটি ঘোড়া ও কিছু খাবার নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।যেতে যেতে অন্য রাজ্যে পৌঁছিয়ে একটি পলাশ গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিল।সামনে কিছু দূরে এক বিশাল অট্টালিকা দুজনের চোখে পড়ল।কিন্তু আর কোনো ঘরবাড়ি তাঁদের চোখে পড়ল না।রাজপুত্র মন্ত্রীর ছেলেকে বলল,চলো ঐ বাড়িতে গিয়ে একটু জল চেয়ে হাতমুখ ধুয়ে আমরা খাবার খেয়ে নিই।বাড়িতে প্রবেশ করে কাউকে ডেকে না পেয়ে চারদিকে ঘুরতে লাগলএমন সময় সামনে একটি দিঘি ও তাতে কিছু পদ্মফুল দেখতে পেল।দুজনে তাড়াতাড়ি দিঘিতে হাতমুখ ধুতে লাগল।হঠাৎ একটি মেয়ের কন্ঠে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল কিন্তু আশ্চর্য কাছাকাছি কোনো মানুষজন দেখা গেল না।মন্ত্রীর পুত্র বলল দেখ বন্ধু সব ফুল সাদা একটি ফুল গোলাপি।রাজপুত্র গোলাপি ফুলটি তোলার জন্য হাত বাড়ালে অমনি ফুলটি দূরে সরে সরে যেতে লাগলআর বলল জল ছিটিয়ে দিন।সেইমতো রাজপুত্র ফুলটিতে জল ছিটিয়ে দিলে একটি অপরূপ সুন্দরী মেয়ে হয়ে গেল।মেয়েটি বুঝতে পারলো রাজপুত্রের ছোঁয়া লেগেছে তার গায়ে।রাজপুত্র তখন তার কাছে এই ফুল হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি কি জানতে চাইলো।এদিকে সূর্যদেব পাটে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।কোথা থকে রাক্ষসীরা হাউ-মাউ-খাও করতে করতে ঐ অট্টালিকার দিকে ফিরে আসছিল।মেয়েটি ওদের বিপদ আন্দাজ করতে পারল।সে তখন ওদেরকে বলল-আজ থেকে আমিও আপনাদের বন্ধু।তাই আপনাদের মঙ্গল করা আমার ধর্মএখন আমার কথা শুনুন।এখান থেকে দুক্রোশ দূরে কেতকী ফুলের বাগান আছে।সেখানে গিয়ে রাতটা কাটান,ভয় নেই।ঐ ফুলের গন্ধ রাক্ষসীরা নিতে পারে না,তাই দূরে থাকে।সকাল বেলায় খাবারের খোঁজে ওরা চলে গেলে আবার আপনাদের সাথে আমার দেখা হবে।এই বলে মেয়েটি জলে ফুল হয়ে গেল আর ওরা দ্রুত চলে গেল।আবার রাক্ষসীরা এসে ফুলটিকে মেয়ে করে প্রাসাদে নিয়ে গেল।প্রতিদিনের মতো স্নান খাওয়া করিয়ে কাছে ডেকে পা টিপিয়ে নিতে লাগলআর কত রকমের গল্প শোনাতে লাগল কিন্তু মেয়েটি কোনো কথা বলছে না দেখে রাক্ষসীরা বলল,তোর আজ কি হয়েছে,শরীর খারাপ?কাঁদছিস কেন রে? ‘তোমাদের কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে’ কোথায় থাকবো,তাই ভয় হচ্ছে।ধূর পাগলি আমাদের কিছু হবে নাএই কথা!তা আগে বলবি তো,ভয় করিস না।তুই যেখানে ফুল হয়ে থাকিস ঠিক সেখানে অনেক নিচে একটি পিতলের কৌটো আছে।তার মধ্যে একটি ভ্রমর আছে।ওকে যদি কোন রাজপুত্র একটানে ছিঁড়তে পারে,তবে আমরা সবাই যে যেখানে থাকবো সঙ্গে সঙ্গে মারা যাব।কিন্তু ওর রক্ত মাটিতে যদি পড়ে তবে আমরা সংখ্যায় দ্বিগুণ হয়ে যাব।বুঝলি কত কঠিন কাজ!নে এবার ঘুমাতো দেখি।পরের দিন সকালে রাক্ষসীরা মেয়েটিকে খাইয়ে দিঘিতে ফুল করে রেখে চলে গেল।বেলা বাড়লে রাজপুত্র ও তাঁর বন্ধু এসে আবার জল ছিটিয়ে ফুলটিকে মেয়ে করে জানতে চাইলো তাঁর ফুল হওয়ার কারণ,আর সে রাক্ষসীদের সঙ্গে থাকে কেন? তখন মেয়েটি বলল-‘সে অনেকদিন আগেকার কথা,আমি তখন খুব ছোট,এখানকার বুড়ি রাক্ষসী আমার বাবাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।বাবা তাঁকে ফিরিয়ে দিল আর বলল-আমার মেয়ে ও স্ত্রী আছে।আমি রাজা,তোমাকে বিয়ে করলে প্রজারা নিন্দা করবে,বলবে-রাজা মশায়ের চরিত্র নেই।আর তাছাড়া আমার ধর্ম বিরুদ্ধ এটা,কোন মতেই সম্ভব নয়তুমি চলে যাও।রাক্ষসী তখন মায়াবিনী রূপ ধারণ করে আমার বাবা ও মাকে মেরে ফেলে আমাকে নিয়ে চলে আসে’তখন থেকে আমি এখানেই থাকি।তবে আমার কোন ক্ষতি করেনি।ওরা আমাকে মেয়ের মতো যত্ন করে বড় করে তুলেছে।কিন্তু আমার এ জীবন ভাল লাগে না।আমাকে আপনারা মুক্ত করন।আর আমি রাক্ষসীদের কাছেই শুনেছি কি করে ওদের বংশ নিধন করা যায়আপনারা পারবেন,আমার বিশ্বাস।তাঁর পর সে সব কথা রাজপুত্র ও মন্ত্রীপুত্রকে বললসেই মতোই রাজপুত্র ভ্রমরটিকে টেনে ছিঁড়ে ফেললরাজকন্যা মুক্ত পেল।এবার রাজকন্যা রাজপুত্র আর মন্ত্রীপুত্রকে নিয়ে সেই কেতকী ফুলের বাগানের উদ্দেশ্যে রওনা হল,আর বলল-আচ্ছা রাজপুত্র,আপনি আমাদের সঙ্গে আমাদের রাজবাড়িতে থেকে যান না।না সম্ভব নয়।আমি ও বন্ধু ভ্রমণ করতে বেরিয়েছি।এরপর বাগানে পৌঁছে একটি চাকার মতো কী একটা দেখল সবাইমেয়েটি বলল আপনি এটিকে ঘোরান।ঘোরানো মাত্রই সঙ্গে সঙ্গে বড় সুরঙ্গ হয়ে গেল।তাতে অনেক দূর পর্যন্ত সিঁড়ি নেমে গেছে।সেখানে গিয়ে দেখে বিশাল রাজবাড়ি।অনেক লোকজন ছুটে এলো।রাজকুমারীকে চিনতে কারো ভুল হল না।সবাই তখন রাজকুমারীর বন্ধুদের অনেক যত্ন করলপরেরদিন কাকভোরে তারা আবার বেরিয়ে পড়ল ভ্রমণের উদ্দেশ্যেযাবার সময় দুই বন্ধু বলল-বিদায় রাজকুমারী,আশাকরি আমাদের আবার দেখা হবে।রাজকুমারী যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে রইল।