Ful Futuk – ফুল ফুটুক ( বর্ধিত এবং পরিমার্জিত সংস্করণ)

ফুল ফুটুক   - হরবিলাস সরকার
ফুল ফুটুক  –  হরবিলাস সরকার


 
( নাটিকা )          

     ( বর্ধিত এবং পরিমার্জিত সংস্করণ)   

: প্রথম
দৃশ্য :

দূর
সম্পর্কের এক মামা ছাড়া নূপুরের আজ আর কেউ নেই। মামা বলতে আসলে সৎ মামা। তার
বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছে নূপুর। প্রতিদিন তাকে সইতে হয় অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা।
একদিন রাত অনেক। সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মগ্ন নূপুর। সামনে
মা-বাবার একটা ফটো
, বই,
খাতা-পত্র। মা-বাবাকে আজ
বেশি করে মনে পড়ছে।

 

নূপুর :  মা,
বাবা, তোমরা কোথায় আছো,
কেমন আছো, আমি জানি না। আমি এখানে খুব ভালো আছি। তোমরা  তোমাদের       নূপুরকে
রেখে চলে গেছো অনেক দূরে। তোমাদের কথা কতমনে পড়ে। কাল আমার সর্বভারতীয় প্রবেশিকা
পরীক্ষা। তোমরা আমাকে আশীর্বাদ করো
,
আমি যেন সফল হতে পারি।

(চোখের জল মোছে। )

(সৎ মামির প্রবেশ )

মামি:
কীরে মেয়ে
, রাশি রাশি বই পড়া।  আবার চোখের জলও ফেলা হচ্ছে দেখছি। তা
বাপ-মায়ের কথা মনে পড়ল বুঝি

?

নূপুর :  কিছু বলবে মামি ?

 

মামি :
বলবো তো বটেই। বলি – রাজকন্যের  মতো বসে
বসে অন্ন ধংস করছো
, আর আমি দিন-রাত খেটে খেটে মরছি। এ আমি সইব না। ঝাঁটা মেরে এবার বিদায় করবো।

 

নূপুর :  মামি,
কাল আমার বড় পরীক্ষা। রোজ
তো করি। আজ একটু মানিয়ে নাও।

 

মামি :
কী –
? কলপাড়ে কাঁড়ি কাঁড়ি বাসন পড়ে আছে। কে
মাজবে
, আমি না আমার মেয়ে ?

 

নূপুর :  আমি কারও কথা বলিনি। রেখে দাও , সকালে মেজে দেবো।

 

মামি :
হায় ! হায়! রে। কী আস্পর্ধা মেয়ের !  জল-জ্যান্ত
মিথ্যা কথা। দুধ-কলা  দিয়ে সাপ পুষছি গো। এ
যে  আমাকেই ছোবল মারছে। মারবে না
? তখনই বলেছিলাম ,
ও মেয়েকে ঘরে  নিয়ে এসো না। আমাকে বোঝালো – সম্পর্কে ভাগ্নি
হয়। আমি বলেছিলাম –

রক্তের সম্পর্ক নেই গো। তুমি
তো সৎ মামা। শোনেনি আমার কথা। এখন আমাদের ঘাড়ে বসে আমাদেরই ঘাড় মটকাচ্ছে। এ আমি
সইব না
,  কিছুতেই
সইব না। আজ তোর
একদিন কী আমার একদিন। (নূপুরের  সামনে থেকে খোলা বইখানা নিয়ে 
ছুঁড়ে ফেলে দেবে। )

 

নূপুর :  এ তুমি কী করলে মামি ? বইটা তো ছিঁড়ে গেল।

 

মামি
: ছিঁড়ুক। এবার তোর চুলের মুঠি ধরে ছিঁড়বো। কী হবে বই পড়ে
? ডাক্তারি  পড়ার
সুযোগ তুই পাবি
? সুযোগ পাবে আমার মেয়ে। পাঁচ-পাঁচজন মাস্টার
ওকে পড়াচ্ছে। আর তুই
? তিন কুলে তোর কে আছে – এই সৎ  মামা-মামি ছাড়া ? একবারও ভেবেছিস্,
তোর গতি কী হবে ? তবে শেষ বারের মতো এই বলে দিলাম – থালা ভর্তি করে ভাত
গিলতে গেলে বাড়ির সব কাজ করতে হবে।
 

নূপুর :  ঠিক আছে মামি। অন্যায় করে  ফেলেছি। আমি যাচ্ছি বাসন মাজতে।  তোমার সব কাজ করে দেবো।   তোমরা ছাড়া পৃথিবীতে আমার  আপন বলে আর কে আছে ! তোমার    পায়ে পড়ে বলছি, আমার আশ্রয়টুকু 
কেড়ে নিও না।
   ( চোখের জল ফেলতে ফেলতে প্রস্থান ) 

মামি :
দেমাক ভাঙলো তবে মেয়ের। ডাক্তার হবার সখ ! মাথায় চুল নেই
, আবার বিনুনি।তোকে সারাজীবন বাসন মেজে  কাপড় কেচে, ঝাঁট দিয়ে খেতে হবে,এই বলে দিলাম।
 

(রাত শেষ হয়। দিনের সূর্য ওঠে ) 

নূপুর :  (মা-বাবার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাবে। হাতে কলম, বই-খাতা। ) মাগো,বাবা ,
তোমাদের মেয়ের আজ জীবনের
বড়ো পরীক্ষা। হতভাগিনীকে শুধু একটু সাহস জুগিও। তোমাদের কাছে আর আমার কিছুই
চাইবার নেই। (ধীরে

ধীরে চলে যাবে। )
 

: দৃশ্য সমাপ্ত : 

: দ্বিতীয় দৃশ্য :

(কুসুমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ) 

সর্বভারতীয়
প্রবেশিকা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। কুসুমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী
নূপুর মণ্ডল
প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
প্রধান শিক্ষিকা আজ অন্তহীন খুশি মনে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন। ভাবছেন কতকিছু।
 

প্র:শিক্ষিকা :
আজ আমার অফুরন্ত আনন্দ। আমাদের মেয়ে
নূপুর জীবনের এক বড়ো পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
ফুল হয়ে ফুটতে চেয়েছিল। বড়ো
ডাক্তার হতে চেয়েছিল। স্বপ্ন ওর পূর্ণ হোক্
,
আজ এই শুভক্ষণে দাঁড়িয়ে
শুধু  এইটুকুই কামনা করি।
 

(দুজন সাংবাদিকের প্রবেশ )

 সাংবাদিক (১) :
গুড মর্নিং ম্যাডাম।

 প্র: শিক্ষিকা : গুড মর্নিং। বলুন ,কী জানতে চান।

 সাংবাদিক (২) :
ম্যাডাম
,আমরা সোনার বাংলা টিভির পক্ষ থেকে এসেছি।

 সাংবাদিক (১) :
আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন যে
,আপনাদের ছাত্রী নূপুর মণ্ডল সর্বভারতীয় প্রবেশিকা
পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। এ ব্যাপারে যদি কিছু বলেন।

 প্র: শিক্ষিকা : সত্যিই আমাদের খুশির অন্ত নেই। আমরা অত্যন্ত গর্ব বোধ করছি। কুসুমপুর উচ্চ বালিকা
বিদ্যালয়ের নাম আজ খুব উজ্জ্বল হল। এই দিনটির কথা আমাদের জীবনে স্বর্ণাক্ষরে লেখা
হয়ে থাকবে।

 সাংবাদিক (২) :
আচ্ছা
,আমরা যার জন্য সকলেই এত গর্ব বোধ করছি , সেই নূপুর কি এসেছে ?

 প্র: শিক্ষিকা : এতক্ষণে তো চলে আসার কথা। একটু অপেক্ষা করুন ,চলে আসবে।

                       (নূপুর এল) 

নূপুর :  আসতে পারি ম্যাম?

প্র:শিক্ষিকা :
ঐ তো
,নূপুর এসে গেছে। এসো নূপুর। ধন্য তুমি। আজ
তোমাকে কী বলে যে ডাকবো! বলতে আমার ইচ্ছে করছে – আমাদের সোনার মেয়ে নূপুর।
 

(নূপুর প্রণাম করবে প্র: শিক্ষিকাকে) 

সাংবাদিক (১) :
তাহলে তুমিই নূপুর মণ্ডল
? 
মিষ্টি তোমার নাম আর অত্যন্ত ভালো তোমার পরীক্ষার ফল। এই
ভালোর জন্য আসলে কোনো বিশেষণই যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে
তোমার মুখে কিছু শুনতে চাই।

 নূপুর :  (নমস্কার জানাবে) আপনাদের প্রতি রইল আমার অন্তরের শ্রদ্ধা আর নমস্কার। এখন আমি আপনাদের
বলবো যে
, আমার যা কিছু ভালো ,যা কিছু কৃতিত্ব ,সবই আমার শ্রদ্ধেয়া শিক্ষিকাদের জন্য। তাঁরা
সকলেই
, বিশেষ করে প্রধান শিক্ষিকা মহাশয়া নিরন্তর
চেষ্টা করেছেন আমার ভেতরে দীপ জ্বালাতে। আমি সেই প্রচেষ্টার মূল্য দিতে পেরেছি।

 সাংবাদিক (২) :
শুনেছি তুমি ডাক্তার হতে চাও। এবার তাহলে বলো – ডাক্তার হয়ে কী করবে
?

 নূপুর :   প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে স্বপ্ন থাকে। আমারও
আছে। কিন্তু দুর্ভাগা দেশে জন্মেছি আমি। দারিদ্রের মধ্যে
দিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছি। ভাগ্য আমার মন্দ। কৈশোরে পা ফেলতেই
আমি আমার বাবা-মাকে হারিয়েছি। জানেন
,
মারণ ব্যাধি যেদিন চোখের
সামনে আমার মা-বাবাকে ছিনিয়ে

নিয়ে চলে গেল , সেদিনই আমি ডাক্তার হবার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।

 সাংবাদিক (১) :
তাহলে তুমি তোমার স্বপ্ন কীভাবে সফল করে তুলবে
?

 নূপুর :   জানি না, কী হবে। সৎ মামার বাড়িতে থাকি। যদি কোনোদিন এই হতভাগিনী নূপুরের স্বপ্ন সফল হয় , চেষ্টা করবো আমার মতো আর যেন কেউ অকালে পিতৃহারা,
মাতৃহারা না হয়।

 সাংবাদিক (২) :
(প্রধান শিক্ষিকার প্রতি ) ম্যাডাম , এসেছিলাম হাসিমুখে অনেক আনন্দ নিয়ে। কিন্তু যেতে হচ্ছে অনেক দুঃখ নিয়ে। তবুও যাবার সময় উদীয়মান এক নক্ষত্রের মঙ্গল কামনা করে যাই। হে
পৃথিবী
,তুমি তাকে বঞ্চিত হতে দিও না। 

(সাংবাদিক দুজনের প্রস্থান )

 প্র:শিক্ষিকা :
নূপুর
,মা আমার ,সোনা
মা। কষ্ট পেও না। জীবনে চলার পথে  যদি দুঃখ
আসে
,সেই দুঃখকে জয় করেই বড়ো হতে হয়।
 

(নূপুর কেঁদে ফেলে। প্র:শিক্ষিকা তাকে সান্ত্বনা দেয় )

 নূপুর :   আত্মীয়রা বলে দিয়েছে – ওরা আর আমাকে রাখবে না।
তাড়িয়ে দেবে।

 প্র:শিক্ষিকা :
না
,আমি তা হতে দেবো না। যে কুঁড়ি ফুল হয়ে ফুটতে
চায়
,তা আমি ঝরে
যেতে দেবো না। দেখ মা
,তুমি আমার মেয়ে। আমার মেয়েটা বেঁচে থাকলে
আজ তোমারই মতো হতো। তুমি যাবে আমার ঘরে
?
আমার ঘরটা আবার আলোয় ভরে উঠবে।

 নূপুর :   ম্যাম !

 প্র:শিক্ষিকা :
ওরে
, আজ থেকে আর ম্যাম বলিস্ না। আমি তোর মা। প্রথম
প্রথম নাহয় মাসিমণি বলেই ডাক্।

 নূপুর :   মাসিমণি, আমি যাবো। আমি তোমার ঘরে যাবো। তোমার মাঝে আমি যে আজ খুঁজে
পেলাম বাঁচার নিশানা।

    (নেপথ্যে
সংগীত : আমি তোমার মাঝে পেলাম খুঁজে বাঁচার এ নিশানা )
    

(দুজনের
প্রস্থান সংগীতে আবেগময় হয়ে )
 

: দৃশ্য সমাপ্ত : 

: তৃতীয় দৃশ্য : 

(আদালত )

(এজলাসে উকিলবাবু কাগজপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন। কাছাকাছি
প্র:শিক্ষিকা ও নূপুর )

 উকিল :
শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায়
,
নূপুরের জন্মলিপিকা আর আপনার
পরিচয়পত্র এবং প্রত্যয়িত কপিগুলো জমা দিন।

 প্র:শিক্ষিকা :
হ্যাঁ
,সব প্রস্তুত আছে। এই নিন।

 উকিল :
বেশ। এবার চুপচাপ বসুন। সময় হয়ে গেছে। মহামান্য এক্ষুনিই এজলাসে প্রবেশ করবেন।

 প্র:শিক্ষিকা :
নূপুর
,মামনি আমার ,তোমাকে
যা জিজ্ঞেস করবেন
,নির্দ্বিধায় উত্তর দেবে, কেমন ?

 নূপুর :   ঠিক আছে, মাসিমণি। 

(মহামান্য প্রবেশ করছেন সহকারী অফিসারকে নিয়ে , সামনে প্রহরী )

 প্রহরী :
সাবধান। মহামান্য কক্ষে প্রবেশ করছেন।
 

(সকলে উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার জানাবেন ) 

(মহামান্য বসবেন। তাঁর পেছনে প্রহরী দাঁড়াবেন ) 

প্রহরী :  সহকারী সাহেব ,ভেতরে
কাউকে ডাকতে হবে
?
 

সহকারী :
উকিল সাহেব
, আপনার মক্কেলগণ হাজির আছেন তো ?
 

উকিল :
হ্যাঁ
, দুজনেই হাজির আছেন।
 

মহামান্য :
অর্ডার
,অর্ডার। সকলের নীরবতা এবং মনোযোগ কাম্য।
আদালতের কাজ শুরু হচ্ছে। উকিল সাহেব
, আপনার বক্তব্য পেশ করুন।
 

উকিল :
ধন্যবাদ। মহামান্য
,ইনি একজন প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ওনার ছাত্রী  ‘নূপুর
মণ্ডল
। শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায় নূপুরকে মেয়েরূপে
গ্রহণ করতে চান।  এই নিন ওনার আবেদনপত্র সহ
অন্যান্য প্রমাণপত্র।
 

(সহকারী হাত বাড়িয়ে নিয়ে মহামান্যের হাতে তুলে দেবেন ) 

মহামান্য :
সহকারী মহাশয়
, আপনি ওনাদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
 

সহকারী :
হ্যাঁ ধর্মাবতার
,আপনার আদেশ শিরোধার্য।
 

(সাংবাদিকগণ প্রবেশ করবেন। রিপোর্ট লিখবেন ) 

সহকারী :
(
গীতা
হাতে নিয়ে ) শ্রীমতী
বন্দ্যোপাধ্যায়
,গীতা ছুঁয়ে বলুন – “হে পৃথিবী,
তোমার আকাশ -বাতাস – মাটিকে সাক্ষী রেখে বলছি ,যা
বলবো হৃদয়ের কথাই বলবো
,মিথ্যা বলবো না। ”নূপুর ,এবার তুমি বলো –
হে পৃথিবী, …………… মিথ্যা বলবো না। ”
 

(সহকারী শুধু “হে পৃথিবী” বলে ধরিয়ে দেবেন ) 

উকিল :
মাননীয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
,
এবার আপনি মহামান্যের সামনে
বলুন – নূপুরকে আপনি মেয়েরূপে গ্রহণ করতে চান কেন
?
 

প্র:শিক্ষিকা :
ধর্মাবতার
,এই সেই মেয়ে , যে
এবছর সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। ওর ইচ্ছে – ডাক্তার হয়ে গরিব
,নিপীড়িত ,বঞ্চিত মানুষের
সেবা করবে। ওর বাবা-মা
, নিকট আত্মীয় বলে কেউ নেই। আমি ওর স্বপ্ন
পূরণ করতে চাই।
 

মহামান্য :
আপনি ওর স্বপ্ন পূরণ করতেই পারেন। কিন্তু তার জন্য ওকে মেয়েরূপে গ্রহণ করতে হবে
কেন
?
 

প্র:শিক্ষিকা :
ধর্মাবতার
,মেয়েটা এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে
অনেক
লাঞ্ছনা,
নিপীড়ন সহ্য করে থাকে। বর্তমানে সেই আশ্রয়টুকুও তারা আর দিতে চায় না। এই
নিদারুণ অমানবিক ঘটনা আমার হৃদয়কে বিগলিত করেছে। ওর মতো আমারও একটা মেয়ে ছিল।
চিরদিনের মতো সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। এখন নূপুরকে বুকে টেনে নিয়ে আমি
আমার যন্ত্রণা জুড়াতে চাই।
 

মহামান্য :
আপনার যন্ত্রণা আমি বুঝি। এখন এ ব্যাপারে মেয়েটির সম্মতি আছে কিনা – জেনে নেওয়া
দরকার।
 

উকিল :
মহামান্য
, সম্মতির কথা আগেই জানিয়েছে। এখন আদালতে নিজের মুখেই সেকথা উপস্থাপন করুক। (নূপুরের দিকে তাকিয়ে ) বলো নূপুর ,তোমার মনের কথা মহামান্যকে বলো।
 

নূপুর :   ধর্মাবতার , শিশুকালে
আমি আমার মা-বাবাকে হারিয়েছি। কোনো সন্তানের জীবনে মায়ের ভূমিকা কতখানি
,আমি বলে বোঝাতে পারবো না। একইভাবে সন্তানও মায়ের কাছে
বড়ো প্রিয়। ভাগ্য আমার সেই মাকে আমার কাছে           আবার ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার দুঃখময়
জীবন তাঁর নিবিড় শান্তির ছায়াশীতল কোলে মায়ের বাসনা পূর্ণ করুক – শুধু এইটুকুই
আপনার কাছে আমার প্রার্থনা।
 

মহামান্য :
ধন্য তুমি মা। তুমি ফুল হয়ে ফুটে ওঠো। আজ এই শুভক্ষণে আমি তোমার কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছার
প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানালাম। “পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না
,তোমার হৃদয়-কুসুমকে পরের জন্য প্রস্ফুটিত করিও। ” আজকের মতো আদালতের কাজ এখানেই শেষ হল।

(উঠে চলে যাবেন ,সাথে 
সহকারী ও প্রহরী চলে যাবেন )
 

সাংবাদিক (১) :
ম্যাডাম
, আমরা আবার এসেছি আপনার কাছে। নূপুরকে পেয়ে
আপনার শুন্য কোল পুনরায় ভরে গেল। এ অত্যন্ত খুশির খবর
, অত্যন্ত আনন্দের।
 

সাংবাদিক (২) :
আর নূপুরও পেয়ে গেল তার হারানো মাকে। এবার ওর অপূরিত স্বপ্ন পূর্ণ হবে এক মহীয়সী
মায়ের পরশে।
 

প্র:শিক্ষিকা :
আপনাদের শুভ কামনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
 

(ধন্যবাদ জানিয়ে সাংবাদিকগণের প্রস্থান ) 

উকিল :
শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায়
,
তাহলে আপনি আপনার মেয়েকে
পেয়ে গেলেন। আমার কাজও শেষ হয়ে গেল। এবার আসি আমি।

 প্র:শিক্ষিকা :
হ্যাঁ
, আসুন। আপনাকে ধন্যবাদ। 

(উকিল সাহেব চলে যাবেন ) 

প্র:শিক্ষিকা :
নূপুর
,সোনা আমার ,আজ
থেকে তুই আমার মেয়ে হ
লি।
 

নূপুর :  মা,
মাগো। ইস! কতদিন পর মা
বলে ডাকলাম। মাগো , জন্ম-জন্মান্তরে এই বন্ধন যেন থাকে।
 

(মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ,যেন
অনন্তকালের হৃদয়ের সম্পর্ক। দুজনের চোখে জল )
 

প্র:শিক্ষিকা :
ওরে আমার মেয়ে
মানুষ তো মরণশীল। “চির স্থির কবে নীর, হায়রে জীবন নদে। জন্মিলে মরিতে হবে ,
অমর কে কোথা কবে ?” আবার মানুষ তো যাযাবর। আজ এখানে ,কাল ওখানে। আজ এ পৃথিবীতে ,কাল না ফেরার দেশে। তবু যতদিন বাঁচবো,তুই ফুল হয়ে ফুটে 
থাকবি আমার বুকে।
 

নূপুর :  মাগো ,
তোমার মাঝে আমি যে আজ খুঁজে
পেলাম সত্যিকারের মাকে।
 

(নেপথ্যে সংগীত : “আমি তোমার মাঝে পেলাম খুঁজে ……..। ” শেষ অর্ধেক। ) 

সমাপ্ত :