Dui Chorer Samajseba – দুই চোরের সমাজসেবা

 

(অণুগল্প – রূপকধর্মী)

জগা
আর বটা মানুষের পকেট কাটতে সিদ্ধহস্ত
। সে ধনীই হোক আর গরিবই হোক সুযোগ পেলে কাউকেই
রেহাই দেয় না। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে মালগাড়ি থেকে কয়লা নামিয়ে নেওয়া
, যন্ত্রপাতি নামিয়ে নেওয়া – এসবে বড়ই ওস্তাদ।

 


এলাকার
এক গণ্যমান্য নেতা দিগ্বিজয় সিংহরাজজীর নজরে পড়ল জগা আর বটাকে । ব্যাস
, জীবনটাই ওদের পাল্টে গেল। সুট-বুট, গলায় টাই,
চোখে সানগ্লাস, যেন একেবারে আধুনিক বাবু। সিংহরাজজীর আনুকূল্যে দুজনের দুচাকার গাড়িও জুটে গেল।

 

একদিন
সিংহরাজজীর গোপন ঘরে জগা
,
বটার ডাক পড়ল। “শোন্, তোরা তো বেকার ছেলে। তোদের একটা কাজ দেবো। নিশ্চয়ই এখনও
বুঝে উঠতে পারিসনি- তোদের আমি কী কাজ দেবো।” জগা
, বটা
মাথা নাড়াল।

 

সিংহরাজজী
মুচকি হেসে বললেন
, “কাজটা হলো – এধারকার মাল ওধারে সাপ্লাই
দেওয়া। করতে পারলে লালে লাল হয়ে যাবি। কেউ তোদের টিকিটিও ছুঁতে পারবে না। পুলিশ
, বি.এস.এফ আমার কথায় ওঠা-বসা করে ।” তাহলে কি সাপ্লাই দিতে
হবে বলুন । “ সিংহরাজজী আস্তে করে
,
না থেমে একটানা বলে দিলেন ,”মেয়ে- গরু।”

 

জগা
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল
, “মেয়ে গরু? কেন, কেন,
শুধু মেয়ে গরু কেন? ছেলে গরুও নয় কেন? “আরে আরে বোকার দল, তা বলিনি,
বলেছি – ‘মেয়ে’ আর ‘গরু’,
বুঝলি ? “ও
, বুঝেছি । ” জগা,
বটা একে অপরের মুখের দিকে
তাকিয়ে হেসে ফেলল । এরপর বটা বললো
,
“বুঝলি জগা, দুটো জিনিস,
মেয়ে আর গরু । ”  আবারও দুজনের হাসি। সিংহরাজজী এবার ধমক দিয়ে
বললেন
, চুপ
কর্
, বাতাসেরও কান আছে। সেনসিটিভ বিজনেস, গোপনীয়তা রক্ষা করাই এ ব্যবসার ধর্ম । ” জগা এবার
সিরিয়াসলি বলল
, “জানি স্যার, একটু
রসিকতা করছিলাম। তবে জনসভায় আপনার বক্তৃতা শুনেছি
,বজ্রের
মতো গলা – ‘
বন্ধুগণ,
চারদিকে তাকালেই শুধু দেখতে
পাবেন -উন্নয়ন আর উন্নয়ন ।তাই আগামী নির্বাচনেও আপনারা আমাদেরকেই ক্ষমতায়
বসাবেন। বিরোধীদের অপপ্রচার চাবুক মেরে রুখে দেবেন’। ” বটা বলল
, “ স্যার,
চিন্তা করবেন না। ভোটে জয়
আপনার নিশ্চিত
, ব্যবসাও আরও ফুলে-ফেঁপে উঠবে। তবে সেই মতোই
আমাদের দিকটাও একটু ভাববেন। ”

 

সিংহরাজজী
মৃদু হেসে তা বুঝিয়ে দিতে ভুল করলেন না। ব্যবসা চলতে থাকল রমরমা গতিতে। দু
বছরেই ফুলে-ফেঁপে উঠলো জগা আর বটা। প্রাসাদসম বাড়ি, গাড়ি,
জায়গা-জমির মালিক হয়ে গেল
দুজনেই। পরবর্তী নির্বাচনে বটা আবার দূরবর্তী কোন কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটের
টিকিটও পেয়ে গেল। জগা মনে মনে ভাবল – “ বটা বেশ বুদ্ধিমান
, যতই হোক ক্ষমতায় আসতে পারলে নাম, যশ দুটোই হবে,
আবার টিকিটিও কেউ ছুঁতে
পারবে না। ” এমনটা ভেবে সেও হাটলো অন্য এক পথে। তার মনে বৈরাগ্য ভাব এলো। ভিন
গ্রামে গিয়ে গেরুয়া বসনে কপালে চন্দনের ফোঁটা-তিলকে সাধুবাবা সেজে এক বিরাট
আশ্রম খুলে বসলেন। 

বাবা ভোলেনাথের মূর্তি বসালেন। রুগ্ন-পীড়িতদের জন্য মাদুলি, তাবিজ-কবজ,
জলপড়া, বশীকরণ ও মামলায় জেতার জন্য নিদানের ব্যবস্থা রাখলেন। জগা
থেকে তিনি হয়ে উঠলেন-
পরম পূজনীয় বাবা যজ্ঞেশ্বর পরমহংস মহারাজ। রাতারাতি সংবাদের শিরোনামে উঠে এলেন তিনি। প্রতিদিন লক্ষ
ভক্তের আনাগোনায় তার আশ্রম মুখরিত হয়। ভক্তরাও বলাবলি করতে লাগল – বাবা
যজ্ঞেশ্বরের আশ্রম জাগ্রত। আর্ত-পীড়িত
,
পাপীতাপীর সেবায় নিবেদিত
তাঁর প্রাণ।

 

বটারও
ভাগ্যোদয় হয়েছে। ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছেন। বাড়ির দেওয়ালে বসানো হয়েছে
মার্বেলের নেমপ্লেট –

 

সেবা নিকেতন

পরহিতব্রতী বিধায়ক বটকৃষ্ণ বৈষ্ণব । ”

 

পাশে
সাধারণ লোকের জন্য একটি
পরিদর্শন কক্ষ
তৈরি করা হয়েছে । সেখানে বেকারত্বের সমাধান
,
প্রোমোটারি, সিন্ডিকেট ইত্যাদি ব্যবসা সংক্রান্ত ও অন্যান্য আলোচনার
জন্য বিভিন্ন গোছের লোকের সাক্ষাতের বিভিন্ন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে । এসব
সুষ্ঠুভাবে হওয়ার জন্য দুজন সাহায্যকারী
,
বাইরে প্রহরীর ব্যবস্থাও
আছে। প্রতিটি আলোচনা চলে অত্যন্ত গোপনে
,
নিভৃতে।

 

জনপ্রিয়
এই বিধায়ক এবং পরমহংস মহারাজকে নিয়ে অজ্ঞাত এক বাউল সৃষ্টি করেছেন লোকগাথা।
বাউলের কন্ঠে ঐ শোনা যায় :-

 

এসেছেন ভগবান, মানুষের বেশে,

তিনি বাবা যজ্ঞেশ্বর। (৩ বার)

আর্তপীড়িত, পাপীতাপী

করে যে তাঁর গুণগান।

মানুষের সেবায় এসেছেন ধরায়

তাঁর যে নিবেদিত প্রাণ।।

 

হয়েছেন বিধায়ক বটকৃষ্ণ বৈষ্ণব,

তিনি গরিবের ঈশ্বর। (৩ বার)

মানুষের সেবায় সঁপেছেন জীবন

হয় যদি হোক মরন।

দীন – দুঃখীরা তাই যে ব্যাকুল

খোঁজে তাঁরই চরণ।।

 

ওগো মানুষ,

এই দুনিয়ায়

গাও তাঁদেরই জয়গান।।(৩ বার)