Anwesha – অন্বেষা

অন্বেষা

 

( অণুগল্প )

অন্বেষা 

   দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অন্বেষার প্রাণবন্ত জীবনটা হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। চার দেওয়ালের বাইরে লজ্জায় বেরনোর উপায় নেই। প্রতিদিন সকাল হয় আর ভাবে – এ যে রাতের চেয়েও বেশি অন্ধকার। স্বপ্ন তার নিদাঘের এক খরতপ্ত নির্জন দুপুরে হঠাৎ দাবানলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। নিদারুণ হৃদয় বিদারক সেই স্মৃতি চিরতরে সে ভুলে যেতে চায় নিজেকে নিঃশেষ করে। পিতৃহারা মেয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তা যে পারে না। মা শহরের বাবুদের বাসায় রান্নার কাজ করে। সেই যে ভোরে বেরিয়ে যায়,ফেরে সন্ধ্যা হলে । এখন তো কাজেও যেতে পারে না। সারাক্ষণ মেয়েকে আগলে রাখে । 
  ক’দিন পর রাতে পূর্ণিমার চাঁদ উঠল আকাশে । জীর্ণ টালির চালের ফাঁক দিয়ে হেসে উঠে সে বলে, “ওগো, সোনার মেয়ে, তোমার চোখে জল কেন ? দ্যাখোতো,আমার বুকে কত কলঙ্ক ! কিন্তু আমার দোষ কোথায় ? তাইতো আমি আমার জ্যোৎস্নায় ভরিয়ে দিই পৃথিবী। কখনও কালো মেঘ এসে আমাকে ঢেকে দেয়। আমার শুভ্র ছটায় সে মেঘ অমনি কেটে যায়।”
   অন্বেষা আবার নতুন করে জীবন শুরু করল। পাশাপাশি বিচার চাইলো আদালতে । নির্ভীক বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলল, “হুজুর, আমার সর্বনাশকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” মন্ত্রীর ছেলে তার দলবল নিয়ে এসে বাড়িতে শাসিয়ে যায় । স্বাক্ষীদের ভয় দেখায়। মন্ত্রীও স্বয়ং গোপনে এসে অন্বেষার মাকে বেশ কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে কেসটা মিটিয়ে নিতে বলেন। অন্বেষার অশ্রুবিন্দু ঝরে পড়ল বটে, কিন্তু দৃঢ়তার সাথে মাকে বলে দিল, “মা, তুমি ওনাকে বলে দাও, আমরা গরিব হতে পারি। আমাদেরও মান-সম্মান, মর্যাদা আছে। আমরা ভোগের বস্তু নই। টাকা দিয়ে ওসব কেড়ে নেওয়া যায় না।”
  মন্ত্রী আস্ফালন দেখিয়ে চলে গেলেন ।
   বিচারের বাণী বড় অসহায়, নিভৃতে কাঁদে। দরদী, মানুষরা এগিয়ে এলেন ৷ কিন্তু অপরাধীর শাস্তি দেবে কে? অন্বেষা প্রতি মুহূর্তে বিপদের মধ্যেও নিজেকে বোঝায় – “অন্বেষা, তুমি নির্যাতিতা,ধর্ষিতা, এ সমাজে তোমার অপরাধীর শাস্তি হবে না। তোমার চোখের জলের মূল্য দেবে না। ‘পথের দাবী’র ‘সব্যসাচী’ ‘ব্রজেন’কে গুলি করে মারতে চেয়েছিলেন। মরেনি। রক্তবীজের মতো সেই ব্রজেনরা অগণিত হয়েছে । দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে । ‘সুমিত্রা’দের ওরা তীব্র লালসা মেটাতে ছলে-বলে-কৌশলে কাছে পেতে চায়। আর চায় বিষয়-আশয়, নাম-যশ, বিলাসিতা। মানুষের মুখোশের আড়ালে ওরা অমানুষ, পাষণ্ড । আজ তুমি কেঁদো না, যদি কোনও দিন আবার ডাক্তারবাবু ফিরে আসেন, তাঁর সামনে সেদিন না হয় কেঁদো আর নালিশ ক’রো ।”